দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এককভাবে ভোট করার জন্য প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াতে ইসলামী।
দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দুই শতাধিক আসনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে গেছে। বাকি আসনের প্রার্থী তালিকা বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। তবে নির্বাচনের সময় বিরাজমান পরিস্থিতির আলোকে ইসলামী দলগুলো নিয়ে জোটবদ্ধ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার জন্যও প্রস্তুতি চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ শুক্রবার কিশোরগঞ্জে জেলা আমিরের শপথ গ্রহণ ও সদস্য (রুকন) সম্মেলনে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনে এককভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন জোট হবে কি হবে না এই প্রশ্ন মাথায় থাকার কোনো দরকার নেই। তিনি বলেন, আমরা যদি দেখি জোটবদ্ধ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের উপকার হবে, আমরা যাব। তা না হলে যাব না।
ইসলামের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে দুনিয়ার স্বার্থকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী কোনো কাজ করবে না। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে জামায়াত। জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনি কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলেও নির্বাচনি মাঠ গোছাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ লক্ষ্যে সারা দেশে মাঠে সরব হয়েছে তারা।
তাদের মূল লক্ষ্য আগামী নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করা। সে জন্য এখন থেকে মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমত তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে দলটি। জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনি লড়াইয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিগত ১৫ বছর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের চরম নির্যাতনের শিকার জামায়াত ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তারা আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে।
দলটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে প্রায় সাড়ে ১৫ বছর পর স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমে ফিরেছে ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতে ইসলামী।এই মুহূর্তে সারা দেশে দলটি ঘরোয়া কার্যক্রমে ব্যস্ত। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে একক নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে দলীয় প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তারা বলছেন, এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারা দেশেই নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব রয়েছে। এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে যেসব নির্বাচনি আসনে ভালো করতে পারবে, সেসব আসনে প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করা হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে এ-সংক্রান্ত কমিটিগুলোর নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। বৈঠক থেকে জেলাগুলোর দায়িত্বে থাকা নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। যেসব আসনে প্রার্থী এখনো বাছাই হয়নি, সেখানে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় নতুন প্রার্থী যোগ-বিয়োগ করছে এই কমিটি।
দলটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, নির্বাচনের ব্যাপারে জামায়াতের দুই ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। প্রথমত, জামায়াত নিজেরাই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের সময় যখন আসবে, তখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করবে, সেই পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেটি এককভাবে, নাকি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হবে, তা এখনই বলার সুযোগ নেই।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ গণমাধ্যমকে জানান, নির্বাচন সামনে রেখে সব দলই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচন কেন্দ্র করে দলকে সংগঠিত করছে। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংস্কারের পর নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হবে। তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী জামায়াত নির্বাচনি সিদ্ধান্ত নেবে।