লিওনেল মেসির দুর্দান্ত গোলে শনিবার লেন্সের বিপক্ষে লিগ ওয়ানে ঘরের মাঠে ৩-১ ব্যবধানের জয় তুলে নিয়েছে পিএসজি। প্রথমার্ধের তিন গোলে কাল পিএসজির জয় নিশ্চিত হয়।
টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকা লেন্স পিএসজির থেকে ছয় পয়েন্টে পিছিয়ে থেকে ম্যাচ শুরু করেছিল। ১৯ মিনিটে মরোক্কান তারকা আশরাফ হাকিমিকে বিপদজনক ভাবে ট্যাকেলের অপরাধে ঘানা মিডফিল্ডার সালিম আব্দুল সামেদকে লাল কার্ড দেখানো হলে বাকি সময়টা লেন্সকে ১০ জন নিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়েছে। আর ঐ ঘটনাই পুরো ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেয়। বিরতির আগে ১০ মিনিটের ব্যবধানে কিলিয়ান এমবাপ্পে, ভিটিনহা ও মেসির গোলে বড় লিড পায় স্বাগতিকরা। ৬০ মিনিটে পেনাল্টি স্পট থেকে লেন্সের পক্ষে এক গোল পরিশোধ করেন প্রিজিমিস্ল ফ্রাঙ্কোভস্কি।
৩১ মিনিটে ভিটিনহার এ্যাসিস্টে এমবাপ্পে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। ৩৭ মিনিট দুর পাল্লার শটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন ভিটিনহা। দুটি গোলই ছিল দেখার মত। কিন্তু আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের গোলটি আগের দুই গোলকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গোল এরিয়ার বাইরে এমবাপ্পের দিকে বল বাড়িয়ে দিয়ে পুনরায় ফরাসি স্ট্রাইকারের ব্যাকহিলে বল পেলে গোলরক্ষক ব্রিস সাম্বাকে কোনাকুনি শটে পরাস্ত করেন মেসি।
এই জয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা নয় পয়েন্টের সুষ্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে গেছে, লিগ শেষ হতে হাতে রয়েছে আর মাত্র সাত ম্যাচ। অর্থ্যাৎ ১১তম লিগ শিরোপা জয় নিশ্চিত করা পিএসজির কাছে এখন সময়ের ব্যপার।
পিএসজি কোচ ক্রিস্টোফে গাল্টিয়ার বলেছেন, ‘আমাদের ধরে নিলে চলবে না কাজ শেষ হয়ে গেছে। আমাদের অবশ্যই মনোযোগ ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। লিড ধরে রাখতে হবে এবং প্রতিপক্ষকে কোন ধরনের প্রত্যাশার সুযোগ দেয়া যাবেনা।’
গত মাসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে পড়ার পর কোচ গাল্টিয়ারের উপর যে চাপ এসেছিল তা এই জয়ে কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে। এছাড়া মাঠের বাইওে কিছু ইস্যু নিয়ে কয়েকদিন ধরে গাল্টিয়ার চাপে রয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে সবকিছুকে পিছনে ফেলে শুধুমাত্র মাঠের মধ্যেই নিজেকে ধরে রাখতে চান পিএসজি বস। এ কারনে ম্যাচের আগে বলেছিলেন ‘খেলোয়াড়দের মতই আমি শুধুমাত্র ম্যাচের উপরই বেশী মনোযোগ দিতে চাই। এই ম্যাচটা আমাদের জন্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। সে কারনেই ফলাফলটাও গুরুত্বপূর্ণ।’
টেবিলের শীর্ষে থাকা পিএসজির এই সমস্যার সুযোগ নেবার আশা করেছিল লেন্স। একইসাথে জয়ের ধারা চার ম্যাচ থেকে আরো বাড়িতে নিতে চেয়েছিল। ১৯৯৮ সালের পর প্রথমবারের মত লিগ শিরোপা জয়ের স্বপ্নেও বিভোর ছিল লেন্স সমর্থকরা। জানুয়ারিতে সর্বশেষ যখন দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল তখন লেন্স ৩-১ গোলে জয়ী হয়েছিল। পার্ক ডি প্রিন্সেসে কাল তাদের শুরুটাও ভাল হয়েছিল।
একের পর এক সুযোগ তৈরী করেও কাঙ্খিত গোলের দেখা পায়নি সফরকারীরা। তার উপর ১৯ মিনিটে হাকিমিকে ট্যাকেলের অপরাধে আব্দুল সামেদ মাঠ ছাড়তে বাধ্য হলে তখনই কার্যত লেন্স ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিল। ৩১ মিনিটে ভিটিনহার পাস থেকে এমবাপ্পে জোড়ালো শটে এগিয়ে যায় পিএসজি। মৌসুমে এটি এমবাপ্পে ২০তম লিগ গোল। এরপর পিএসজির জার্সি গায়ে ভিটিনহার প্রথম গোলে ব্যবধান দ্বিগুন হয়। ৪০ মিনিটে মেসি যে গোল দিয়ে ব্যবধান ৩-০’তে নিয়ে গেছেন তা সম্ভবত ফ্রান্সের দুই বছরের ক্যারিয়ারে আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের সেরা গোল। এবারের মৌসুমে এটি মেসির ২০তম ক্লাব গোল।
দ্বিতীয়ার্ধে আরো কিছুটা সংঘবদ্ধ হয়ে মাঠে নামে লেন্স। ফাবিয়ান রুইজের হ্যান্ডবল থেকে ফ্রাঙ্কোভস্কি এক গোল পরিশোধ করলেও পরবর্তীতে গোলটি আর কোন কাজে আসেনি। লেন্সের সামনে এখন একটি একটাই লক্ষ্য টেবিলের শীর্ষ তিনে টিকে থেকে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। লেন্স ম্যানেজার ফ্রাংক হেইস বলেছেন, ‘আজ আমরা পয়েন্টের ব্যবধান কমানোর লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। কিন্তু পরিস্থিতি দারুন কঠিন ছিল। অবশ্যই এবারও শিরোপা প্যারিসেই থাকছে, এনিয়ে কোন সন্দেহ নেই।’