ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪

বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

বছরে আরওপিজনিত অন্ধত্বের শিকার ৩৩ হাজার শিশু!

child blindness
শিশু। ছবি: সংগৃহীত

উন্নত চিকিৎসার কারণে দেশে অনিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব ও ক্ষীণদৃষ্টি মানুষের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু নানা ধরনের দৃষ্টিজনিত ত্রুটি এখনো বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবেই রয়ে গেছে।

শিশুদের চোখের মারাত্মক ব্যাধি ‘রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিউরিটি’ বা ‘আরওপি’। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর প্রিভেনশন অব ব্লাইন্ডনেসের (আইএপিবি) তথ্য বলছে, প্রতি বছর ৩২ হাজার ৩০০ শিশু আরওপিজনিত অন্ধত্বের শিকার হয় বা দৃষ্টিশক্তি হারায়।

এমন পরিস্থিতিতে আজ অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব দৃষ্টিদিবস-২০২২। বিশ্বব্যাপী চোখের যত্ন নেওয়ার জন্য গণসচেতনতা তৈরি, চক্ষু রোগ নির্মূলে প্রভাবিত করা, চোখের যত্ন নেওয়ার তথ্য জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোই বিশ্ব দৃষ্টি দিবসের লক্ষ্য। ২০০০ সালে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল সাইট-ফার্স্ট-ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে এই দিবসের সূচনা করে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করছে।

সর্বশেষ ২০২১-২২ সালের জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে জনসংখ্যার দশমিক ৬৯ শতাংশ মানুষ অন্ধত্বের শিকার। অথচ এই জরিপের আগে দেশে অন্ধত্বের সংখ্যা ছিল ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। একইভাবে বর্তমানে ক্ষীণদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা ৩ শতাংশ। কিন্তু দৃষ্টিজনিত বাকি সমস্যাগুলো এখনো বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

জাতিসংঘের তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৩০ লাখ শিশু জন্ম নেয়। এদের মধ্যে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৪ লাখ শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়, যারা আরওপির ঝুঁকিতে থাকে।

চোখের ছানিজনিত অন্ধত্ব যা আগে ১১ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৫ লাখ ১৭ হাজার ছিল বর্তমানে ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ছানি রোগী রয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার। এছাড়া পঞ্চাশোর্ধ্ব জনগণের মধ্যে অন্ধত্বের হার দেড় শতাংশ। ত্রিশোর্ধ্ব জনগণের মধ্যে এই হার শূন্য দশমিক সাত শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তৃতীয় পর্যায়ে দেশের চার বিভাগে ১৩টি জেলার ৪৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত ৪৫টি কমিউনিটি ভিশন আই কেয়ার সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

এদিকে, দেশে অন্ধত্বের হার এক শতাংশ কমেছে, যা ২০ বছর আগের জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ কম।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেটিনা বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির মহাসচিব ডা. দীপক কুমার নাগ জানান, অন্ধত্ব ও ক্ষীণদৃষ্টি দৃষ্টিজনিত সমস্যা না। কারণ এই দুটি ক্ষেত্রে চোখ আর ভালো হয় না, স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে না। কিন্তু দৃষ্টিজনিত সমস্যার সমাধান হয়। চশমা, চিকিৎসা বা অন্য কোনো মাধ্যমে তাদের চোখ ভালো হয়ে যায়।

অপরদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বিশ্বে প্রায় ৪ কোটি মানুষ নিবারণযোগ্য অন্ধত্বের শিকার। দৃষ্টিহীন মানুষের সংখ্যাও প্রায় ২৪ কোটি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতি মিনিটে ১২ জন মানুষ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছেন। এর মধ্যে একজন শিশু। বাংলাদেশে ৭৫ লাখের বেশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার শিশু। এছাড়া বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার প্রধান কারণ ছানিজনিত। দেশে বছরে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ অন্ধত্বজনিত ছানি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ডা. দীপক কুমার নাগ বলেন, ডায়াবেটিসজনিত চোখে সমস্যা এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতি ১০০ জন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে ২০ জনেরই ডায়াবেটিসজনিত চোখের সমস্যা থাকে। যাদের ২০ বছরের বেশি ডায়াবেটিস তাদের ৬০-৬৫ শতাংশেরই রেটিনা সমস্যা থাকে। ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছে এমন রোগীদের মধ্যে যারা ইনসুলিন ব্যবহার করে, তাদের শতভাগই দৃষ্টি সমস্যায় ভোগে।

এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, সঠিক সময় চিকিৎসা নিলে শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব। চিকিৎসার মধ্যে আছে লেজার ও ইনজেকশন। অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা থাকলে লেজারের বদলে ইনজেকশন দিয়ে থাকি, এটাও খুব কার্যকরী চিকিৎসা। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট বিনামূল্যে এই শিশুদের স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা দিয়ে থাকে।