জুলাই ২৭, ২০২৪

শনিবার ২৭ জুলাই, ২০২৪

কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় মরিচ চাষিদের মুখে তৃপ্তির হাসি

কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় মরিচ চাষিদের মুখে তৃপ্তির হাসি।
কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় মরিচ চাষিদের মুখে তৃপ্তির হাসি। ছবি: ফেসবুক

কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামেও খুশি এ অঞ্চলের মরিচ চাষিরা। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ভরা মৌসুমে মরিচের ভালো দাম পেয়ে দ্বিগুণ লাভবান হয়েছেন মরিচ চাষিরা। প্রতি বছর চাষিরা মরিচের চাষাবাদ করে বদলে দিয়েছে নিজের ভাগ্যের চাকা। ক্ষেতের মধ্যেই স্থানীয় পাইকারদের কাছে মরিচ বিক্রি করতে পেরে স্বস্তিও পেয়েছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠে লাল টুকটুকে পাকা মরিচ তোলা ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার নারী-পুরুষসহ শিশুরাও। নদীবেষ্টিত এ উপজেলায় এখন চলছে মরিচ তোলার মৌসুম। মরিচ এখানকার মানুষের প্রধান ফসল। পাশাপাশি ভালো বাজার মূল্য এবার মরিচ চাষিদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।

তিতাসের চরাঞ্চলে এবার মরিচের উৎপাদন ভালো হওয়ার পাশাপাশি বাজারে উপযুক্ত দাম পেয়ে কয়েক হাজার প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষি এবার নিজদের ভাগ্যই বদলে ফেলেছে। মরিচ চাষিরা জানিয়েছে, গত ৪/৫ বছর মরিচের দাম বাড়লেও ভালো ফলন পাওয়া যায়নি। এবার একই সাথে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। চাষিরা এবার কয়েক বছরের লোকসান এক মৌসুমেই পুষিয়ে নিচ্ছে।

প্রথমে কাঁচা মরিচ বিক্রি করে ভালো দাম পেয়ে এখন মৌসুম শেষে লাল রঙা পাকা মরিচ শুকানো হচ্ছে। চরাঞ্চলসহ মরিচ চাষ এর নির্দিষ্ট এলাকায় এখন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে শুকনো মরিচের গন্ধ। দিন-রাত মরিচ নিয়ে কাজ করার পরেও মরিচ চাষিদের মুখে এখন তৃপ্তির হাসি। তিতাসের মাঠে-মাঠে এখন যত দূর চোখ যায় শুধু মরিচ, আর মরিচ। টিনের চালে, বাড়ির ওঠানে, বিদ্যালয়ের ছাদে এমনকি ফসলি জমিতে লাল টুকটুকে মরিচের পসরা সাজিয়ে রেখেছে মরিচ চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১৪০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ফলনও ভালো হয়েছে। এ এলাকায় বেলে-দোঁআশ মাটি হওয়ায় মরিচ চাষের জন্য বেশী উপযোগী। কৃষকেরা মনের আনন্দে শীতকালে জমিতে অন্য কোনো শস্য না বুনে মরিচের চাষ করে।

তিতাস উপজেলার জগৎপুর থেকে রাস্তার দুই ধারে বিভিন্ন বাড়িতে ও গ্রামের ক্ষেতে মরিচ শুকানো হচ্ছে। কোথাও-কোথাও দল বেঁধে মহিলারা মরিচ তুলছে। মাথাভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদের জানান, তিনি ৩৫ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেন। এ সময়ে পাকা মরিচ শুকিয়ে রাখেন। বর্ষা মৌসুমে দাম বেশি হলে বিক্রি করবেন। একই কথা বলেন, ওই গ্রামের আয়েত আলী।

তিতাস এলাকার চাষিরা এ মৌসুমে বিপদ না পড়লে মরিচ বিক্রি করে না। মরিচ শুকিয়ে ঘরে রাখলে কয়েক মাস পর আরো বেশি দাম পাওয়া যাবে। তাই কেউই পাকা মরিচ বিক্রি করতে চায় না। কড়িকান্দি বাজারের এক ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, মরিচ চাষ করে এখানকার মানুষ জীবিকা নির্বাহী করে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সালাহ উদ্দিন বলেন, স্বাদে অনন্য হওয়ায় তিতাসের মরিচের খ্যাতি দেশ জুড়ে। তাই নামি-দামী মসলা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নজর এ মরিচের দিকে। যার জন্য চাহিদা অনেক দামও পেয়ে থাকেন ভাল।

শুকনো মরিচের তুলনায় কাঁচা মরিচ বিক্রি করে কৃষকরা বেশি লাভ করতে পারেন। এতে কৃষকরা মরিচ চাষের প্রতি আরো আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমরা কৃষকদের মরিচ চাষে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করছি।