বুধবার ১২ নভেম্বর, ২০২৫

কী হবে জানি না, গাজার দিকে যাচ্ছি—শহিদুল আলম

রাইজিং ডেস্ক

কী হবে জানি না, গাজার দিকে যাচ্ছি—শহিদুল আলম/ছবি: ফেসবুক

মানবিক সহায়তা নিয়ে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বর্তমানে গাজার উপকূল থেকে প্রায় ৩৭০ নটিক্যাল মাইল (বা ৬৮৫ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছে। এই বহরের অন্যতম সদস্য, বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, এই অনিশ্চিত যাত্রাপথের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।

স্বাভাবিক গতিতে চললে এক দিনের মধ্যে গাজায় পৌঁছানো সম্ভব হলেও পুরো বহরের গতি কমে গেছে। এর প্রধান কারণ, ছোট সহকারী নৌযানগুলোকে পেছনে ফেলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত। সব নৌযানকে একসাথে রেখে সমন্বয় বজায় রাখতে গিয়ে জাহাজের গতি কমাতে হয়েছে, যা এই যাত্রায় বেশি সময় নিতে পারে। শহিদুল আলম উল্লেখ করেছেন, তাদের জাহাজটি দ্রুত গতির জন্য তৈরি। ধীরে চললে ইঞ্জিন ও নৌচালনায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হচ্ছে। সামগ্রিক সমন্বয় বজায় রাখতে তারা এই ধীর গতি মেনে চলছেন।

অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়েছে ফ্রিডম কোয়ালিশনের দুটি জাহাজ, যা যান্ত্রিক সমস্যার কারণে এখনও মূল বহরে যোগ দিতে পারেনি। এদিকে, আটটি জাহাজ ইতোমধ্যে তাদের অতিক্রম করে গতকাল এগিয়ে গেছে। শহিদুল আলমের অনুমান, তারা সম্ভাব্য অবস্থান থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে থাকতে পারেন।

যাত্রাপথের আবহাওয়ার অবস্থা সারাক্ষণ বদলে যাচ্ছে। ফ্লোটিলাটি ইতোমধ্যে একবার বেশ খারাপ আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়েছে। বর্তমানে আকাশ মেঘলা, তবে গরম অনুভূত হচ্ছে। নজরদারির জন্য তাদের কাছে একটি ড্রোন ওয়াচ থাকলেও তা দিয়ে সব দৃশ্যমান হয় না, ফলে চোখে দেখা তথ্যের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।

২০১০ সালের ফ্লোটিলা হামলায় ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে ১০ জন নিহত হয়েছিলেন, যেখানে অনেককে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনো ফ্লোটিলার সদস্যদের মনে আছে। এবার বৃহৎ সংখ্যক নৌযান একসাথে যাওয়ায় চাপ ও অনিশ্চয়তা দুটোই বেশি। তাদের জাহাজে ৯৬ জন এবং পুরো বহরে মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০০ জন।

শহিদুল আলমের জাহাজটি উচ্চ হওয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষে সরাসরি আরোহণ করা কঠিন হতে পারে। তাই তারা হেলিকপ্টার থেকে নেমে আক্রমণের পথ বেছে নিতে পারে, যা এক ভিন্ন ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। আগের আক্রমণে স্বাস্থ্যকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর আক্রোশ বেশি ছিল। তাদের জাহাজেও এই দুই পেশার মানুষ বেশি থাকায় আক্রমণের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

নজরদারির সময় গত ২ অক্টোবরের দিকে একটি নৌবাহিনীর জাহাজ খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। তবে পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেটি ইসরায়েলের জাহাজ নাও হতে পারে। বরং তুরস্ক বা অন্য কোনো দেশের জাহাজ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

শহিদুল আলম দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধ আইনগতভাবে অবৈধ। তারা যে আন্তর্জাতিক সাগরপথ দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে ইসরায়েলের বাধা দেওয়ার কোনো বৈধতা নেই। এই প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সেই অবৈধতা এবং গাজার মানবিক সংকটকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। জাহাজে থাকা চিকিৎসাকর্মীরা গাজাবাসীকে চিকিৎসাসেবা দেবেন এবং পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে থেকে করণীয় সবকিছু করবেন।

ফ্লোটিলার সদস্যরা সম্ভাব্য সব পরিণতির জন্য প্রস্তুত। কোনো কারণে যদি তাদের আটক করা হয়, তখন কী করা হবে, সে বিষয়ে প্রত্যেককে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। কোনো একক ব্যক্তির ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। সকলের সঙ্গে বিকল্প পথ ও সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

শহিদুল আলম ব্যক্তিগতভাবে ডিপোর্টেশন বা ফিরে যাওয়ার বিকল্প মেনে নিতে রাজি নন। তিনি নিজেকে ‘অবৈধভাবে প্রবেশকারী’ বলে স্বীকার করবেন না—এই মনোভাব নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন।

শেষে, বাংলাদেশের সকল নাগরিকের প্রতি তিনি গভীর কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাদের এই অসাধারণ সমর্থন জাহাজের সকল সদস্যের জন্য একটি বড় প্রেরণা বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন