
বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের শর্ত হিসেবে খেলাপি ঋণ কমাতে বলেছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো বেড়ে দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এ অবস্থায় ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের বিষয়ে সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
বুধবার ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ঢাকা সফরে আসা আইএমএফ প্রতিনিধিদল।
বৈঠকে তারা খেলাপিদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা তৈরি, সব খেলাপির জন্য নতুন ঋণ অনুমোদন বন্ধ ও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি খেলাপিদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ে (আরজেএসসি) নতুন করে তালিকাভুক্তির সুযোগ বন্ধ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আইএমএফ বেশকিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ। দেশে এখন ডলার সংকট চলছে। এই সময়ে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নভেম্বরে এই কিস্তি পাওয়ার কথা। তবে তা নির্ভর করছে ঋণের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া শর্ত পরিপালনের ওপর।
তাই সরকারি বিভাগগুলো শর্ত পূরণে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। অংশীজনদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করবে আইএমএফ। আর্থিক খাতের স্থায়িত্ব, ব্যাংক খাতের সংস্কার, তারল্য ব্যবস্থাপনা, ডলারের বাজারভিত্তিক লেনদেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি, সুদের হার ও মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এরই অংশ হিসাবে প্রথম দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বসে সংস্থাটির বিশেষ প্রতিনিধিদল।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আইএমএফের ঋণের যেসব শর্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের পূরণ করার কথা, তার মধ্যে বেশিরভাগ পূরণ হয়েছে। তবে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছিল, সেই পরিমাণ রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের সময় কিছু শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে বেশকিছু শর্ত পূরণ করা হয়েছে। দু-এক জায়গায় ব্যর্থতা আছে। রিজার্ভ কিছু কম আছে। রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। তবে অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশের কথা ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশ করেছে। বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া মুদ্রার বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হার প্রবর্তন করা হয়েছে। সুদহারের নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। তাদের দেওয়া যেসব শর্ত অর্জন হয়েছে তা জানিয়েছি আর যেগুলো অর্জন হয়নি সেগুলো কেন হয়নি তাও জানানো হয়েছে।
শর্ত পূরণ ও ব্যর্থতা নিয়ে আইএমএফের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ মুখপাত্র বলেন, শুধু তো বৈঠক শুরু হয়েছে। তারা (আইএমএফ) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে বসে আলোচনা করবে। প্রথমে তথ্য নিচ্ছে তারপর আবার বৈঠক করবে। ১৯ অক্টোবর শেষ মিটিং, সেখানে তাদের মতামত জানাবে। আমরাও আমাদের বিষয়গুলো জানাব।
এ ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ভর্তুকি, ব্যাংক খাতের সংস্কার, মুদ্রানীতি হালনাগাদ ও বাস্তবায়নের দুর্বলতা, নীতির আলোকে সামনের দিনে সম্ভাব্যতা, ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের হালনাগাদ তথ্য এবং সঞ্চয়পত্রসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।