রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. বিজন মোহন চাকী ও যুগ্ম-সম্পাদক ড.মোঃ সাজ্জাদ হোসেন পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশজুড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। সেই আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হয়।
তার শরীরে ছররা গুলির আঘাত দেখা গেছে। তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও কয়েকটি গণমাধ্যমে সম্প্রচার করেছে।গুলিবিদ্ধ হওয়া ভিডিও দেখে মনে হয় এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। একটি গণতান্ত্রিক দেশে যৌক্তিক ও ন্যায় সংগত দাবিতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলনরতা উচ্চশিক্ষা বিদ্যাপীঠে একজন নিরস্র শিক্ষার্থীর বুকে নিন্দনীয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেছেন, ‘রংপুরে একজন ছাত্র পুলিশের গুলিতে মারা গেছে’। কিন্তু বিভিন্ন সমর্থিত সূত্রে জানা গেছে,মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদ নিহতের মামলায় প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে সুস্পষ্ট ভাবে পুলিশ বাহিনী তাদের দায়ভার এড়িয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এতে প্রকৃত দোষীর শাস্তি না পাওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়ে যায়।
আমরা মনে করি,মামলার বাদী এবং বিবাদী মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এমতাবস্থায়, ন্যায় বিচার পাওয়া আশঙ্কা থেকে যায়। অতএব, নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
বিবৃতিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, এইদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের সংঘর্ষের সময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনাব মোঃ আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অত্যন্ত নিন্দনীয়। একজন শিক্ষক যখন ইট-পাটকেল, টিয়ারশেল উপেক্ষা করে জীবন বাজি রেখে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং পরবর্তীতে সেই শিক্ষকের দিকে অভিযোগের তীর ছোঁড়া হলে ভবিষ্যতে কোন শিক্ষক কোন শিক্ষার্থীর বিপদে এগিয়ে আসতে ভয় পাবেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীর আর্থিক সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। সুতরাং আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় এমন অবিশ্বাস্য অপরাজনীতি এবং অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।
বিবৃতিতে শিক্ষক নেতারা আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানতে পেরেছি, সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনার জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটক করছে এবং অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কোন নিরপরাধ শিক্ষার্থী যাতে কোন ধরনের হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি মনে করে,কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যুক্তি যা ইতোমধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে। অবিলম্বে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি গুলো পুরোনো সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে যেন কোনো অসাধু মহল ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেই বিষয়ে সকলকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানাই।