নভেম্বর ১৪, ২০২৪

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

‘বিশ্ব কন্যা দিবসে কিছু প্রস্তাবনা’

Rising Cumilla - Mother And Child
ছবি: রাইজিং কুমিল্লা/শাদমান আল আরবী

আজ ১১ই অক্টোবর ‘আন্তর্জাতিক কন্যা দিবস’। আজকের কন্যা আগামী দিনের ‘মা’। আপনার কন্যাকে অবহেলা নয়, যত্ন সহকারে রাখুন। আগামীর কর্ণধার আপনার মেয়ে। মেয়ে শব্দটা ছোট হলেও এর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের সমাজের কতশত বাঁধা, বৈষম্য ও অসমতা। সমাজ থেকে তার কর্মস্থল ঠিক করে দেওয়া হয়।

পুরুষশাসিত সমাজে নারীকে পুরুষের অধীনে রাখা হয়। যা নিয়ে আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী সেরি অটনার তোর “Female to Male as Nature is to Culture”। যেখানে বলা হয়েছে নারীকে প্রকৃতি এবং পুরুষকে সংস্কৃতির সাথে তুলনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যে এক বিশাল অসমতার পাহাড় তৈরি হচ্ছে।

যা একজন মেয়ের জন্মের পর থেকে শুরু হয়। তাকে বেঁধে দেওয়া হয় সামাজিক কাঠামোতে। যেখানে একজন মেয়ে তার নিত্য জীবনে কী কী করতে পারবে , আর কী কী করতে পারবে না তা সমাজ থেকে তাকে শিখিয়ে দেওয়া হয়। যদিও নারী পুরুষের এই পার্থক্যগুলো শারীরিকভাবে পাওয়া ভাবলেও একজন শিশুকে তার জন্মের পর থেকেই সামাজিক কাঠামোর মাধ্যমে তার স্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হয়।

যার ফলে প্রতিনিয়ত মেয়েরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। যা একজন মেয়ের জীবনে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তার মতাদর্শকে প্রভাবিত করে তাকে দমিয়ে রাখা হচ্ছে। কারণ সমাজ থেকে একজন মেয়েকে নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে সে কী করতে পারবে , আর কী কী পারবে না। এই বৈষম্য সময়ের পরিক্রমায় রূপ পরিবর্তন করলেও দূর হচ্ছে না। কারণ মানুষের মাঝে মেয়েদের প্রতি মনোভাব হলো —দূর্বল, নরম, কোমল, অসহায়, এক চলতে পারে না এবং গৃহে থাকার উপযুক্ত ইত্যাদি।

সভ্যতার ইতিহাসে কোনো জাতিই বিপরীত লিঙ্গের অবদান অস্বীকার করতে পারবে না। সমাজে দুইজনের সমান ভূমিকা রয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম তার ” নারী ” কবিতায় বলেছেন,
“কোন কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারী/প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী”।

একটি সমাজ বা রাষ্ট্র তখন উন্নত হবে যখন নারী পুরুষ একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে এবং অপরের ভূমিকাকে সম্মান করবে। আজকের কন্য দিবসে আমরা চাওয়া প্রতিটি মেয়ে নিজের মতো করে বাঁচুক। প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিবে নির্ভয়ে। যেখানে থাকবে না কোনো প্রকার বৈষম্য।

একজন মেয়েকে সাহস দেওয়া হোক যে সে পারবে। ভিতরে সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করতে দিবে, তাকে সমাজের দোহাই দিয়ে করা হবে না ঘর বন্ধি। একটি পরিবারের মেয়েদের শুধু মেয়ের দৃষ্টিতে না দেখে সন্তানের দৃষ্টিতে দেখলে তখন বাবা-মা শুধু ছেলেদের না মেয়েদেরও “বংশের প্রদীপ” হিসেবে ভাবতে পারবে।

আজকে এই দিনে একটাই আপনার কন্যার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন‌। প্রতিটি মানুষ নিজের অবস্থান থেকে পরিবর্তন হলে সমাজের কাঠামোও পরিবর্তন হবে‌। সর্বোপরি নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াসে সমাজ এগিয়ে যাক।

লেখা: আছমা আক্তার, শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ ও সম্পাদকীয় পর্ষদ সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।