বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশে দারিদ্র্যের হার প্রায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মতো কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে। আগে কুড়িগ্রামে সর্বোচ্চ দরিদ্র্য মানুষের বাস থাকলেও এবার বরিশালে দারিদ্র্য হার বেড়ে ২৬ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। আজ বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস সন্মেলন কক্ষে ‘হাউজহোল্ড ইনকাম এন্ড এক্সপেনডিচার সার্ভে (এইচআইইএস) ২০২২’ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দেশের প্রতিটি খানার মাসিক গড় আয় বেড়ে ৩২ হাজার ৪২২ টাকা হয়েছে যা ২০১০ ও ২০১৬ সালে ছিলো ১১ হাজার ৪৭৯ টাকা ও ১৫ হাজার ৯৮৮ টাকা। ২০২২ সাল পর্যন্ত খানা প্রতি মাসিক ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৫০০ টাকায় যা ২০১৫ সালে ছিলো ১৫ হাজার ৭১৫ টাকা।
এইচআইই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এখন দেশের ৯৯ দশমিক ৩৪ খানা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় রয়েছে। যেখানে পল্লী অঞ্চলের রয়েছে ৯৯ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলের ৯৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে ছিলো ৭৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। উন্নত টয়লেট ব্যবহারের হার এখন ৯২ দশমিক ৩ শতাংশ।
দেশে ৭ বছর ও তার বেশি জনগোষ্ঠীর স্বাক্ষরতার হার এখন ৭৪ ভাগ। একজন ব্যক্তি খাবার কিনতে আয়ের ৪৫.৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় করছেন, যা আগে ছিলো ৪৭.৭ ভাগ। খাদ্যের বাইরে জনগণের অন্যান্য পণ্য কেনার প্রবণতাও বেড়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের ভাত খাওয়া কমেছে। এখন একজন ব্যক্তি দিনে ৩২৮.৯ গ্রাম ভাত খান, আগে এই পরিমাণ ছিলো ৩৬৭.২ গ্রাম। গত ৬ বছরে সবজি ও মাংস খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। একজন ব্যক্তি প্রতিদিন ৭২.৫ গ্রাম প্রোটিন খাচ্ছেন, আগে যা ছিলো ৬৩.৮ গ্রাম।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বরিশাল বিভাগে সবোর্চ্চ দারিদ্র্য হার পাওয়া গেছে। আগে কুড়িগ্রামে সর্বোচ্চ দারিদ্র্য হার থাকলেও এবার সেটি বরিশালে গেছে। উচ্চ ও নিম্ন উভয় দারিদ্র্য রেখার মাধ্যমে প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের বিভাগগুলোর মধ্যে সবোর্চ্চ। গত বছরে বরিশালে উচ্চ দারিদ্র্য রেখা অনুযায়ী দারিদ্র্য হার ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং নিম্ন দারিদ্র্য রেখা অনুযায়ী দারিদ্র্যের হার ১১ দশমিক ৮ শতাংশ পাওয়া যায়। অন্যদিকে বিভাগগুলোর মধ্যে উচ্চ দারিদ্র্য রেখা অনুযায়ী, খুলনায় দারিদ্র্যের হার ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ঢাকায় নিম্ন দারিদ্র্য রেখা অনুযায়ী অতি দারিদ্র্যের হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় তিনি ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন, ব্র্যাকে চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এনডিসি, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মো. কাউছার আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ এমপিএইচ।