হেলথ অ্যান্ড মরবিডিটি স্ট্যাটাস সার্ভে ২০২৫ অনুযায়ী, দেশে প্রতি এক হাজার জনসংখ্যার মধ্যে অসুস্থতার প্রাদুর্ভাব ৩৩২ দশমিক ১৯ জন। জরিপ পরিচালনার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র উঠে এসেছে।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সম্মেলনকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
শহর–পল্লীতে অসুস্থতার পার্থক্যের জরিপে দেখা যায়, পল্লী অঞ্চলে প্রতি এক হাজারে অসুস্থতার হার ৩৩৩ দশমিক ৩০ জন, আর শহরাঞ্চলে এই হার ৩৩১ দশমিক ৪ জন। অর্থাৎ পল্লীতে অসুস্থতার প্রবণতা শহরের তুলনায় সামান্য বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারীদের মধ্যে অসুস্থতার হার পুরুষদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। প্রতি এক হাজার নারীর মধ্যে ৩৫৪ দশমিক ৬ জন এবং পুরুষের ক্ষেত্রে এই হার ৩০৯ দশমিক ২ জন।
বিশেষ করে বয়স্ক নারীদের মধ্যে অসুস্থতার হার পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।
শীর্ষ ১০টি রোগ:
প্রতি এক হাজার জনসংখ্যায় দেশে সবচেয়ে বেশি যে ১০টি রোগে মানুষ ভুগছে, সেগুলো হলো—
উচ্চ রক্তচাপ: ৭৮ দশমিক ২৮ জন
পেপটিক আলসার: ৬৩ দশমিক ৭৯
ডায়াবেটিস: ৪৩ দশমিক ১৫
বাত বা আর্থ্রাইটিস: ৩৯ দশমিক ৭৫
চর্মরোগ: ৩৭ দশমিক ২৩
হৃদরোগ: ৩১ দশমিক ৩২
হাঁপানি: ৩০ দশমিক ৯৪
অস্টিওপরোসিস: ২২ দশমিক ৩০
হেপাটাইটিস: ২২ দশমিক ৩০
ডায়রিয়া: ১৫ দশমিক ৮৯ জন
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ে অসুস্থতা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বয়স যত বাড়ছে, অসুস্থতার হারও তত বাড়ছে।
এক বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে প্রতি হাজারে অসুস্থতার হার ২৩২ জন হলেও, ৩৯ থেকে ৭৫ বছর বয়সিদের মধ্যে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫৪ জনে।
চিকিৎসা ব্যয়ের চিত্র:
জরিপ অনুযায়ী, ব্যক্তিপ্রতি গড় চিকিৎসা ব্যয় ২ হাজার ৪৮৭ টাকা। নারীদের গড় চিকিৎসা ব্যয় ২ হাজার ৪৭৬ টাকা এবং ওষুধে ব্যয় গড়ে ২ হাজার ৩৮৭ টাকা।
সরকারি স্বাস্থ্যসেবা বেশি ব্যবহার করলেও নারীদের চিকিৎসা ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কোথা থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন মানুষ:
জরিপে অংশ নেওয়া মানুষের মধ্যে—
৫১ দশমিক ১ শতাংশ স্ব-চিকিৎসা বা স্থানীয় ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন
প্রায় ২০ শতাংশ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন
মাত্র ১১ দশমিক ৫ শতাংশ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন
এ ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের তুলনায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা বেশি গ্রহণ করছেন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আগ্রহ কম
দেশে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান এমন মানুষের হার মাত্র ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
শহরাঞ্চলে এই হার ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং পল্লী অঞ্চলে ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
সিজারিয়ান প্রসবের হার উদ্বেগজনক:
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে সিজারিয়ান প্রসবের হার ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ।
প্রসবপ্রতি গড় ব্যয় ২২ হাজার ৬৫৫ টাকা।
মাতৃত্বসংক্রান্ত তথ্য:
২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি নারীদের মধ্যে—
৫ দশমিক ২ শতাংশ নারী জরিপকালে গর্ভবতী ছিলেন।
৬ দশমিক ৯ শতাংশ নারী তথ্য সংগ্রহের আগের ১২ মাসে সন্তান জন্ম দিয়েছেন।
দেশে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতার হার ৫ দশমিক ২ শতাংশ। প্রতি ১০০ জনে গড়ে ৫ দশমিক ২ জন মানুষ কোনো না কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জীবনযাপন করছেন।
নারীদের মধ্যে এই হার কিছুটা বেশি—প্রতি ১০০ জনে ৫ দশমিক ৩ জন, আর পুরুষদের মধ্যে ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
এলাকাভেদে দেখা যায়, শহরাঞ্চলে প্রতিবন্ধকতার হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পল্লী অঞ্চলে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রতিবন্ধকতা-সম্পর্কিত চিকিৎসায় গড় ব্যয় ৬ হাজার ৭৭৫ টাকা।
পল্লী অঞ্চলে এই ব্যয় গড়ে ৭ হাজার ২৬৯ টাকা, যা শহরাঞ্চলের গড় ৫ হাজার ৪১৭ টাকার তুলনায় বেশি।
জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুজুর আলী।
বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় প্রকল্প পরিচালক মোস্তফা আশরাফুজ্জামান জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
