মঙ্গলবার ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

সেপ্টেম্বরে সড়কে ৫০২ জনের প্রাণহানি—যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বরে সড়কে ৫০২ জনের প্রাণহানি—যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন
গত মাসের ১২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ড ভ্যানের পেছনে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় বাবা-মেয়ে নিহত হয়/ছবি: সংগৃহীত/কোলাজ রাইজিং কুমিল্লা

গত সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৫৬৭টি দুর্ঘটনায় ৫৬৫ জন নিহত এবং ৯৮২ জন আহত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে কেবল সড়কেই ৫০৪টি দুর্ঘটনায় ৫০২ জন নিহত ও ৯৬৪ জন আহত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সড়ক দুর্ঘটনার এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংগঠনটি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে রেলপথে ৫০টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত ও তিনজন আহতের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এছাড়া নৌপথে ১৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৭ জন, আহত হয়েছেন ১৫ জন এবং তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

সেপ্টেম্বরের মোট দুর্ঘটনার মধ্যে ১৯১টি ছিল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এসব ঘটনায় ১৯৯ জন নিহত ও ১৮৮ জন আহত হয়েছেন। এই সংখ্যা মোট দুর্ঘটনার ৩৭.৮৯ শতাংশ এবং মোট নিহতের ৩৯.৬৪ শতাংশ ও আহতের ১৯.৫০ শতাংশ।

বিভাগীয় পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে—মোট ১২৬টি। এতে ১২২ জন নিহত ও ২১৬ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বরিশাল বিভাগে—মোট ২২টি। এসব ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৪৭ জন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একটি উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি বলছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়ার উদ্যোগ নিলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা দ্বিগুণ হতে পারে। এই পরিকল্পনায় ‘গলদ’ রয়েছে বলে মনে করছে সংগঠনটি। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এই যানকে নিবন্ধন দেওয়া হলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা দিগুণ হবে।

সেপ্টেম্বরের সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৯ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩৩ জন চালক, ১০৬ জন পথচারী, ২৬ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৫ জন শিক্ষার্থী, ৮ জন শিক্ষক, ৮৮ জন নারী, ৫৪ জন শিশু, দুজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন আইনজীবী, একজন সাংবাদিক, একজন চিকিৎসক এবং ১২ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন পাঁচজন পুলিশ সদস্য, একজন সেনা সদস্য, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন আইনজীবী, একজন চিকিৎসক, ১২৬ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ১০২ জন পথচারী, ৬৭ জন নারী, ৪৯ জন শিশু, ৫৬ জন শিক্ষার্থী, আটজন পরিবহন শ্রমিক, আটজন শিক্ষক ও সাতজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৭৭২টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে ২৯.০১ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেল, ২২.০২ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৬.৫৮ শতাংশ বাস, ১২.১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৭.৩৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৭.২৫ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, এবং ৫.৫৬ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস।

সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪৮.৮০ শতাংশ ছিল গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৮.৫৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৭.৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়া, ৩.৭৬ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০.৩৯ শতাংশ চাকায় ওড়না পেছিয়ে এবং ০.৫৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটেছে।

দুর্ঘটনার স্থান বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪৫.০৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৫.৩৯ শতাংশ ফিডার রোডে এবং ৩.৯৬ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৯৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৫৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।

আরও পড়ুন