
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এই সংশোধনীগুলোর মাধ্যমে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হলো, যার মধ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাতিল এবং ‘না ভোট’ পুনর্বহাল অন্যতম।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় আরপিও সংশোধনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই সভায় সভাপতিত্ব করেন।
ইভিএম বাতিল ও ‘না ভোট’ পুনর্বহাল:
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি জানান, আরপিওতে আনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী হলো ইভিএম সংক্রান্ত বিধান বাতিল করা। একই সঙ্গে ‘না ভোট’ দেওয়ার সুযোগ পুনর্বহাল করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ২০১৪ সালের মতো ‘সাজানো নির্বাচন’-এর পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই এই বিধান আনা হয়েছে। এখন কোনো নির্বাচনী আসনে যদি মাত্র একজন প্রার্থী থাকেন এবং ভোটাররা যদি তাঁকে অপছন্দ করেন, তবে তাঁরা ‘না ভোট’ দিতে পারবেন। ‘না ভোট’ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে সেই আসনে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এর মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিতর্ক এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রার্থীর দেশি-বিদেশি আয়ের তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক:
নির্বাচনী সংস্কারের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় পদক্ষেপ হলো প্রার্থীদের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রার্থীকে তাঁর দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আয় এবং সম্পত্তির পূর্ণ বিবরণ হলফনামায় প্রদান করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে এই হলফনামাগুলো উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা হবে, যাতে জনগণ সহজেই প্রার্থীর আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে পারে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী:
আরপিওতে আরও যেসব গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেগুলো হল:
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সামরিক বাহিনী: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় এবার সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পলাতক আসামিদের নিষেধাজ্ঞা: পলাতক আসামিদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
জামানত বৃদ্ধি: নির্বাচনী জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
চাঁদা গ্রহণে স্বচ্ছতা: রাজনৈতিক দলগুলোকে ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান বা চাঁদা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে এবং অনুদানদাতার ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ডাক ভোটের সম্প্রসারণ: বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী ভোটার ও নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারাও এখন থেকে ডাকের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।
ভোট গণনায় গণমাধ্যমের উপস্থিতি: ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে, যা প্রক্রিয়াটির স্বচ্ছতা বাড়াবে।
ভোট বাতিলের ক্ষমতা: কোনো নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম হলে পুরো এলাকার ভোট বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে।
প্রতীকে স্বচ্ছতা: জোটের প্রার্থীদের প্রতীক ব্যবহারে স্বচ্ছতা আনতে বিধান যোগ করা হয়েছে, যাতে ভোটাররা সহজেই বুঝতে পারেন কোন দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন।
আইন উপদেষ্টা জানান, এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর আইন নীতিগতভাবে অনুমোদন পেয়েছে।







