লালমনিরহাট জেলায় শুরু হয়েছে আগাম জাতের আমন ধান কাটার উৎসব। আমন ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে। এর ফলে একই জমিতে তিনটি ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হবে কৃষকরা।
দেশের সীমান্তবর্তী উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। জেলার ৫টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা এলাকার মাঠগুলোতে যতদূর চোখ যায় চারদিকে শুধু সোনালী ফসলের সমারোহ। পুরো মাঠ যেন সোনালী রঙে সেজেছে। তবে এবার ভালো ফলনের পাশাপাশি ধানের ভালো দামে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।
গত বছর এ সময় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ১২০০- ১৩৫০টাকা পর্যন্ত। ধানের বর্তমান বাজারদরে খুশি কৃষকরা । ধানের দাম আরও বাড়বে এমন প্রত্যাশাও করছেন তারা।
কৃষক আব্দুল মিয়া(৪৮) বলেন, নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ বছর আমনের উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। তবে এবার ফলন আশানুরূপ হয়েছে। পোকা-মাকড়ের তেমন উৎপাতও ছিল না। বলা যায় ধানের ফলন মোটামুটি ভালোই।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বিঘা জমি থেকে আমি প্রায় ১৫ মণ ধান পেয়েছি । এ বছর বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৮ -১০ হাজার টাকা। সার ও অন্যান্য কীটনাশকের দাম বাড়ার পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। তাই আশা করছি, কয়েকদিন পর ধানের দাম আরও বাড়বে।
জেলা সদরের বড়বাড়ী হাটের ধানের পাইকার ফারুক মিয়া বলেন, হাটে নতুন ধানের তেমন সরবরাহ নেই। ধানের দাম কমার আশংকা নেই। তবে দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি আরো বলেন, এখন অধিকাংশ কৃষকই বাড়ি থেকে ধান বিক্রি করে। ধানের পাইকাররাও কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে ন্যায্য মূল্যে ধান কিনছেন। বর্তমানে আমরা প্রতি মণ ধান ১২০০-১৩৬০ টাকায পর্যন্ত কিনছি।
এ জেলায় গত কয়েকদিন আগে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে কিছু জায়গায় পাকা ও আধাপাকা ধানের গাছ গুলো মাটিতে হেলে পড়েছিল কিন্তু ধানের দানা গুলো শক্ত হয়ে যাওয়ায় হেলে পড়া ধান গাছগুলোর তেমন ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশংকা নেই বলে জানিয়েছিলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন।
গত বুধবার বিকেলে সদর উপজেলার বড়বাড়ী বাজারে কৃষক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম (৪০) বলেন, ধানের বর্তমান বাজারদরে মোটামুটি ভালোই ।এ বছর ৮ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম ২ বিঘা জমির ধান ঘরে তুলেছি বাকি ৬ বিঘা জমির ধান ৫-৬ দিনের মধ্যে ঘরে তুলবো। আবার ধান কাটা শেষ হলেই সেই জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ করার ও প্রস্তুতি নিচ্ছি।
একই এলাকার কৃষক আবুছালাম ( ৪৬) বলেন, চলতি মৌসুমে সময় মতো বৃষ্টি এবং অনুকূল আবহাওয়া থাকায় অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও মোটামুটি ভালোই ধানের আবাদ হয়েছে। মানভেদে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৩৬০ টাকায় পযন্ত। তিনি আরো বলেন, আমরা এবার আগাম আমন ধান চাষ করেছি। এ ধানের ফলন আর দামও অনেক ভালো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, আমন চাষ শুরুর পর থেকেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দুই ফসলী বা তিন ফসলী জমিগুলোতে কিভাবে ধানের ফলন ভালো হবে সে ব্যাপারে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এবার জেলায় ৮৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আগাম ধানের চাষাবাদ হয়েছে । ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান আগাম কাটা হয়েছে।
এবার আমন চাষে কৃষকদের বাড়তি কিছু খরচ করতে হয়েছে। তবে, ধানের ফলন আশানুরূপ। কৃষকরাও আশানুরূপ দরে ধানও বিক্রি করতে পারছেন। খবর: বাসস