
বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঝড়-বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে। বাড়িঘরে হাঁটু থেকে কোমরপানি। গ্রামীণ সব সড়ক, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। ভেঙে গেছে বাঁধ। ভাঙছে নদী। বন্ধ নৌ চলাচল। বিদ্যুৎহীন লাখো মানুষ। সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে এমন অবস্থা দেশের অন্তত ১৪ উপকূলীয় জেলার।
এসব জেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। বিপর্যস্ত উপকূলীয় এলাকার জনজীবন। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় এটি পটুয়াখালীর খেপুপাড়া দিয়ে উপকূল অতিক্রম করেছে। অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপে উপকূলীয় জেলাগুলোতে জলোচ্ছ্বাস হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সৃষ্ট লঘুচাপটি গতকাল গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। ভোর থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে ছিল ঝোড়ো হাওয়া। ফুঁসতে থাকে নদনদী।
গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। জোয়ারে ডুবেছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা। ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেছেন, নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা নেই। ২৪ মে টেকনাফ দিয়ে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটে। এটা অনেক সক্রিয়। এ সক্রিয়তা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে দেয়নি। তবে এমন বৃষ্টি থাকতে পারে শনিবার পর্যন্ত।
ছয় জেলায় বন্যার আভাস
ভারী বৃষ্টিতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের ছয় জেলা– ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল এক বুলেটিনে জানায়, আগামী দু’দিন ফেনীর মুহুরী নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি রয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বাড়তে পারে।
আর মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। পরদিন এসব নদীর পানি কমে যাওয়ার আভাসও দিয়েছে পাউবো। সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ সময় সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি রয়েছে।
বিভিন্ন জেলা উপজেলার খবর:
নোয়াখালী: স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে নোয়াখালীর নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে গেছে নিঝুমদ্বীপসহ বেশ কিছু এলাকা। সাগর উত্তাল থাকায় হাতিয়ার সঙ্গে নৌ যোগাযোগ দু’দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছেন শতাধিক মানুষ।
এছাড়া টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে শহরের ফ্ল্যাট রোড, শিল্পকলা একাডেমির পাশের সড়ক, হাকিম কোয়ার্টার সড়ক। এছাড়া সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছিল না বিদ্যুৎ।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমদ জানান, বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেড ক্রিসেন্টসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।
এদিকে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে জেলা সদরসহ সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বুধবার (২৮ মে) সকাল ১০টা থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে সব ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কক্সবাজার: জোয়ারের পানিতে ডুবে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে দানু মিয়ার (৪০) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত দানু ওই এলাকার নুর হোসেনের ছেলে।
পাথরঘাটা (বরগুনা): বরগুনার পাথরঘাটায় জোয়ারের পানির তোরে বেড়িবাঁধ ভেঙে ছয় গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি পানিবন্দি রয়েছে।
বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারে পানি ভেতরে ঢুকলেও ভাটায় এখনও নামেনি পানি। উপজেলার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের হলতা নদীর মানিকখালী অংশে বাঁধ ভেঙে যায়।
এদিকে গত দুদিন ধরে পাথরঘাটায় ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখন্ পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়ায় গাছপালা ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে উপকূল জুড়ে রয়েছে আতঙ্ক। বিশেষ করে বলেশ্বর ও বিষখালী নদী সংলগ্ন বাসিন্দারা পড়েছেন বিপাকে।
উপজেলার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের মানিকখালী গ্রামের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম জানান, বুধবার থেকেই পাথরঘাটায় বৃষ্টি ও জোয়ারের তোরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নাচনাপাড়া হলতা নদীর বেড়িবাঁধ মানিকখালী অংশ ভেঙে ছয়টি গ্রামের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলো হলো- মানিকখালী, নাচনাপাড়া, জ্ঞানপাড়া, উত্তর কাঠালতলী, কেরামতপুর ও পুটিমারা।
মানিকখালী গ্রামের আব্দুল জলিল ও আতিকুর রহমান বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে আমাদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। রান্না ঘর তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল রাত থেকে রান্না করতে না পারায় শুকনো খাবার খেয়ে আছি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গত ৮ আগস্ট মানিকখালি গ্রামের কিছু মানুষ বেড়িবাঁধের কিছু অংশ পানির সংকট নিরসনের জন্য কেটে ফেলেন। পরে স্থানীয় এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই বাঁধ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। উপজেলা কাকচিড়া ইউনিয়নের রাজু মিয়া নামের এক ঠিকাদার মেরামতের কাজ পেয়ে মাটির কাজ শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিন পর অজ্ঞাত কারণে মেরামত বন্ধ রাখা হয়। ফলে পানির চাপে আবার ভেঙে যায় বাঁধ।
নাচনাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মহিউদ্দিন পান্না বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে ছয়টি গ্রাম তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিন নুর বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে যে বার্তা এসেছে, তাতে বেড়িবাঁধ নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে জলোচ্ছ্বাস যদি বেশি হয় এবং তা যদি বেড়িবাঁধ উপচে পরে তাহলে তো ঝুঁকি আছেই। পাথরঘাটায় প্রায় তিন থেকে চার কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর শুনেছি। তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। বৃষ্টি থামলেই তারা এসে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করবেন।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। শুকনো খাবারের প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সরবরাহ করা হবে।
ভোলাসংলগ্ন মেঘনার দৌলতখান ও তজুমদ্দিন, বিষখালীর ঝালকাঠি ও বরগুনার বেতাগী, পায়রার মীর্জাগঞ্জ, কচার উমেদপুর, বলেশ্বরের পিরোজপুর পয়েন্টে জোয়ারের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে নদনদীসংলগ্ন চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পিরোজপুর: পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। ডুবে গেছে ইন্দুরকানীর একাংশ, কালাইয়া, সাঊদখালী, বালিপাড়া, চরবলেশ্বর, চণ্ডিপুর, খোলপটুয়া ও কলারণ।
সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার আশাশুনিতে জোয়ারে উপকূল রক্ষা বাঁধের ৬৮ নম্বর পোল্ডারের পাশে রিং বাঁধ ভেঙে প্রায় ৪০০ বিঘা আয়তনের চিংড়িঘের তলিয়ে গেছে। গত তিন দিনে ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ঘের মালিকরা জানিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এ ছাড়া জোয়ারের পানিতে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীসহ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। গতকাল দুপুরে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। তলিয়ে যায় ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি। বৃষ্টি ও জোয়ারে তলিয়ে গেছে পটুয়াখালী শহরের পুরাতন হাসপাতাল রোড, মহিলা কলেজ রোড, মুন্সেফপাড়া, জুবিলী স্কুল রোড ও লঞ্চঘাট। পিরোজপুরের ইন্দুরকানী, মঠবাড়িয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও বৃষ্টির প্রভাবে বাগেরহাটের নদনদীর পানি বেড়েছে। সুন্দরবনের নদীগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় দুই-তিন ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্লাবিত হয়েছে। দুবলার চর, করমজলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গেছে। সুন্দরবনের শেলার চর থেকে নদীতে ভেসে যাওয়ার সময় হরিণ শাবক উদ্ধার করেছে বনরক্ষীরা। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এটি বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ভোলা: ভোলার তজুমদ্দিন স্লুইসগেট এলাকার নির্মাণাধীন রিংবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে স্রোতের তোড়ে পাঁচটি কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোলার সঙ্গে সব রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। চরফ্যাসনের চর কুকরী-মুকরী ইউনিয়নের চর পাতিলার দুই গ্রাম ও বাঁধের বাইরে পাঁচ শতাধিক পুকুর ও খামারের মাছ, গবাদি পশু ভেসে গেছে। ধসে পড়েছে পাকা সড়ক।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের আনোয়ারায় শঙ্খ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকছে জোয়ারের পানি। এতে তলিয়েছে কৃষি জমি ও মৎস্যঘের।
বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বৃষ্টি ও জোয়ারে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হাঁটু সমান পানিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কাঁচা রাস্তা ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে শতাধিক মৎস্যঘের। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন।
বিরতিহীন বৃষ্টিতে মানুষের দুর্ভোগ
সকাল থেকে শুরু বৃষ্টি গভীর রাত পর্যন্ত হয়েছে। সন্ধ্যার পর বৃষ্টির জোর কিছুটা কমলেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মূল সড়ক পানিতে ডুবেছে। ভোগান্তিতে পড়েন ঘরে ফেরা মানুষ। অনেক এলাকায় দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। রাজধানীতে যানবাহনের চাপ ছিল কম। বাস, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং রাইড শেয়ারিংয়ের বাইক না থাকায় ঘরে ফেরা নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। পথচারীদের অভিযোগ, বৃষ্টির কারণে রিকশা ভাড়া দ্বিগুণ-তিন গুণ চাওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা: কুমিল্লায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড। এতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। টানা বর্ষণে ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন যাপন। দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো।
কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে আজ শুক্রবার (৩০) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে
সরেজমিনে সিটিতে ঘুরে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিতে নগরীর চর্থা, ঠাকুরপাড়া, চাঁনপুর, ঝাউতলা, সালাহউদ্দিন মোড়, আশোকতলা, মুরাদপুর, নুরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
একই সাথে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীরা। অনেক চালক এই সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন। কান্দিরপাড় থেকে আলেখারচর পর্যন্ত যেখানে সাধারণত ভাড়া ২০-৩০ টাকা, সেখানে আজ গুনতে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। নগরীর অন্যান্য সড়কেও একই অবস্থা।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে গোমতী নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তা বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ বরুড়া জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. আহসান উল্লাহ জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দিবাগত মধ্যরাতে কুমিল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের চারটি খুঁটি উপড়ে পড়ে এ ঘটনা ঘটে।
তিনি জানান, বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ৪০-৫০ ফুট সাইজের এসপিসি তিনটি খুঁটি ভেঙে পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়েছিল। সকালে সেগুলোকে সরিয়ে রাস্তা সচল করা হয়েছে। পুরো সংযোগ মেরামত করতে আজ বিকেল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ঝোড়ো বাতাসে এসব খুঁটি উপড়ে পড়েছে। সেখানকার একটি ট্রান্সফরমারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে উপজেলায় সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্র জানায়, বরুড়া উপজেলার অধিকাংশ এলাকা বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।
এ ছাড়া উপজেলার সুষুন্ডা এলাকায় একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপর গাছ পড়ে খুঁটি ভেঙে পড়েছে।
রাজধানী: রাজধানী ঢাকায় শুক্রবার সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সারাদিন ভারী বৃষ্টিতে ডুবে যায় ঢাকার বিভিন্ন সড়ক।
এদিকে আজ শুক্রবার (৩০ মে) আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলামের পূর্বাভাস জানানো হয়েছে, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে এক নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত গভীর স্থল নিম্নচাপটি উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে স্থল নিম্নচাপ আকারে আজ সকাল ৯টায় টাঙ্গাইল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করেছে। এটি আরও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে পারে। স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।
এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে দেশের অন্তত ১৪ উপকূলীয় জেলার।
এসব জেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। বিপর্যস্ত উপকূলীয় এলাকার জনজীবন। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় এটি পটুয়াখালীর খেপুপাড়া দিয়ে উপকূল অতিক্রম করেছে। অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপে উপকূলীয় জেলাগুলোতে জলোচ্ছ্বাস হয়েছে।