তাসনুবা আকতার, যার বয়স সবে মাত্র ২৩ বছর চলে। যেখানে জীবনের রঙ্গিন সময়কে কাজে লাগানোর কথা সেখানে বেছে নিয়েছে প্রতারণার পথ। রূপের ঝলক কাজে লাগিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের তরুণ থেকে বৃদ্ধ সকল শ্রেণীর লোকদের কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নেয় সে।
প্রেমের এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীকে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে গোপন ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও ধারণ করে পরবর্তীতে এই ভিডিও দিয়ে তার সঙ্গীরা কখনো ডিবি, কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং করে অর্থ আদায় করতেন।
সর্বশেষ তার প্রতারণার ফাঁদে পড়েন কুমিল্লা লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা গ্রামের মামুন (ছদ্মনাম), তাসনুবা তার রূপের ঝলক দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং করে মামুনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা।
আজ শনিবার (৪ মে) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান।
পুলিশ সুপার জানান, স্থানীয় একটি প্রতারক চক্র টার্গেট করে ভুক্তভোগী লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা গ্রামের মোঃ মামুনকে (ছদ্মনাম)। একপর্যায়ে চক্রের সদস্য তরুণী তাসনুবার মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা হয়। পরে তাসনুবা ও প্রতারণার চক্রের আরেক সদস্য মোজাম্মেল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শারিরিক সম্পর্কের প্রলোভনে ভুক্তভোগীকে নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে প্রতারক তাসনুবা অম্লীল ও অনৈতিক কাজের ভিডিও চিত্র ধারণ করে। পরে, ধারণকৃত ভিডিও চিত্রের ভয় দেখিয়ে তারা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে, ডিবি পরিচয়ে আগমন ঘটে প্রতারক চক্রের অপর দুই সদস্য আয়াত উল্লাহ ও আব্দুর রহিমের। তাদের সঙ্গে থাকে ইমরান হোসেন ও কবীর হোসেন। ভুক্তভোগীকে থানায় মামলা দেওয়ার ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হাতিয়ে নেওয়া হয় ভুক্তভোগীর কাছে থাকা নগদ ৩০ হাজার টাকা, ৭ টি খালি স্ট্যাম্পে ভুক্তভোগীর স্বাক্ষরও গ্রহণ করা হয়।
এতেও চক্রটি ক্ষান্ত না হয়ে ভিকটিমকে মামলায় জড়ানো ও প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে ভিকটিমের কাছ থেকে স্বাক্ষরিত ৭ টি চেক ও নগদ ২ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করে। পরবর্তীতে আরো ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা দেওয়ার শর্তে ভুক্তভোগীকে ছেড়ে দেয়।
এসপি আরও জানান, ‘পরবর্তীতে চক্রের আরেক সদস্য মোজাম্মেল হক নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে শুরু করে ভুক্তভোগীকে নতুন করে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে ভুক্তভোগীর অনৈতিক ভিডিও দিয়ে “কাল সময়” নামক একটি মিডিয়ার নাম বলে নিউজ তৈরি করা হয়। উক্ত নিউজ ভুক্তভোগীর ছেলের মোবাইলে প্রেরণ করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা। ভুক্তভোগীর ছেলে বাবার সম্মানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিমাণে প্রতারক চক্রকে নগদ টাকা ও বিকাশের মাধ্যমে সর্বমোট ২৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করে।’
এই ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করে।
পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে শনিবার রাতে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এসময় তাদের কাছ থেকে অলিখিত ৭টি স্ট্যাম্প, ভুক্তভোগীর স্বাক্ষরিত ৭ টি চেক, চাঁদাবাজির নগদ ২৪ হাজার টাকা ও অপরাধে ব্যবহৃত ১টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন- কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালি থানার সুবর্ণপুর এলাকার সৈয়দ আব্দুর রউফ এর ছেলে সৈয়দ আয়াত উল্লাহ (৩৭), বালুতুপা গ্রামের মোঃ ইসহাক মিয়ার ছেলে ইমরান হোসেন (৪০), একই এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে মোঃ কবির হোসেন (২৮), বরুড়া উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মোঃ আব্দুল মালেকের ছেলে মোঃ মোজাম্মেল হক (৩৬), গালিমপুর গ্রামের মোঃ আলী আজগর এর ছেলে মোঃ আব্দুর রহিম, চান্দিনা উপজেলার কেশরা গ্রামের মৃত শফিকুল ইসলামের মেয়ে তাসনুবা আক্তার (২৩) ও লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা গ্রামের মোঃ মোস্তফা কামালের ছেলে মোঃ সাখাওয়াত হোসেন (২৮)।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনেঅতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মংনে থোয়াই মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) নাজমুল হাসান রাফি ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রাজেশ বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।