প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের এই দিনে মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার বড় সন্তান শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সাল থেকে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি।
শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার, ২০১৪ সালে তৃতীয়বার এবং ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। তিনি ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকে (অনার্স) ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী জন্মদিনে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তার জন্মদিন উৎসবমুখর পরিবেশে নানা কর্মসূচিতে উদযাপন করবে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। আজ বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে। বাদ আসর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঈদে মিলাদুন্নবি এবং শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দোয়া ও মিলাদ হবে। একই সঙ্গে সকাল ৯টায় মেরুল বাড্ডায় বৌদ্ধমন্দিরে বৌদ্ধ সম্প্রদায়, খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে এবং বেলা ১১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ প্রার্থনাসভার আয়োজন করবে।
আওয়ামী লীগ ঘোষিত দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন কাল বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে আলোচনাসভার আয়োজন করা হবে। এদিন ঢাকাসহ সারা দেশে সব সহযোগী সংগঠন আলোচনাসভা, আনন্দ র্যালি, শোভাযাত্রা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ দিবসটির তাৎপর্য অনুযায়ী বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি পালন করবে। এসব কর্মসূচি পালনে সহযোগী সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাগুলোর সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা, শেখ রাসেলসহ তারা পাঁচ ভাই-বোন। তবে দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া কেউই এখন আর জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে বাবা বঙ্গবন্ধু এবং মা বেগম ফজিলাতুন নেছাসহ সবাই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন।
বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড.ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় শেখ হাসিনার। বাবা জেলে, নিজে গৃহবন্দী-এমন অবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই প্রথম সন্তান ‘জয়’-এর মা হন তিনি। পরের বছর ৯ ডিসেম্বর জন্ম হয় কন্যা পুতুলের।
ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ খ্যাতি লাভ করেছেন। মেয়ে সায়মা হোসেন কাজ করেন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বা অটিজম আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে। রাজনীতির শত ব্যস্ততার মধ্যেও শেখ হাসিনা একজন মমতাময়ী মা, নানি ও দাদি হিসেবে সুপরিচিত।
শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্যঅন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা লেখালেখিও করেন। তার লেখা এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। প্রকাশিত অন্যতম বইগুলো হচ্ছে- শেখ মুজিব আমার পিতা, সাদা কালো, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আমাদের ছোট রাসেল সোনা, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক উন্নয়ন, বিপন্ন গণতন্ত্র, সহে না মানবতার অবমাননা, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, সবুজ মাঠ পেরিয়ে ইত্যাদি।