জানুয়ারি ১০, ২০২৫

শুক্রবার ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

পাসপোর্ট বাতিল হলে কী হয়?

Rising Cumilla - Passport
ছবি: সংগৃহীত

সাতই জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম ও জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করার কথা জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

পাসপোর্ট মূলত একটি দেশের ভ্রমণ বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেশের সংবিধান অনুযায়ী পাসপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে যাওয়া এবং দেশে ফিরে আসা কোন নাগরিকের মৌলিক অধিকার।

এবার চলুন জেনে নেয়া যাক, সরকার কখন বা কি কি কারণে পাসপোর্ট বাতিল করতে পারে? পাসপোর্ট বাতিল হলেই বা কী হয়? এক্ষেত্রে যাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয় তাদের পরবর্তী করণীয় কী?

যেসব কারণে সরকার পাসপোর্ট বাতিল করতে পারে

‘দ্য বাংলাদেশ পাসপোর্ট অর্ডার, ১৯৭৩’ অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিকদের পাসপোর্ট প্রদান, বাতিল এবং এ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকার এই অর্ডার অনুযায়ীই পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

এই অর্ডারে যেসব কারণে পাসপোর্ট বাতিল করা যায় সে বিষয়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, অখন্ডতা অথবা দেশের নিরাপত্তা অথবা জনস্বার্থে বাতিল করা যাবে। নৈতিক স্খলনজনিত কারণে পাসপোর্টধারী ব্যক্তি দুই বছরের বেশি সময়ের জন্য দণ্ডিত হলে তার পাসপোর্টও বাতিল করতে পারে সরকার।

দেশের যে কোন আদালত পাসপোর্টধারী ব্যক্তির বিষয়ে আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা দেয় তবেও বাতিল হবে পাসপোর্ট। কেউ যদি তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট গ্রহণ করে তবে সরকার তা বাতিল করতে পারে। একজনের পাসপোর্ট আরেকজনের পজিশনে থাকলে অর্থাৎ রংফুল পজিশন হলে সরকারের তা বাতিল করার এখতিয়ার রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ” রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং জনস্বার্থে সরকার পাসপোর্ট বাতিল করতে পারে। এই সেকশন অনুযায়ী সরকার তাদের পাসপোর্ট বাতিল করেছে বলে আমার মনে হয় “।

” যদি কেউ পাসপোর্ট আবার ফেরত পেতে চায় তবে তাকে নয় ধারা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। বিচার বিশ্লেষণ করে সরকার তদন্তের পর সিদ্ধান্ত নেবে। এটাই আমাদের দেশের আইনি বিধান ” বলেন মনির।

পাসপোর্ট বাতিল হলে কী হয় ?

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গত ২২ অগাস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার উপদেষ্টা, মন্ত্রিসভার সদস্যসহ পদে থাকার কারণে যাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছিল তাদের নিয়োগ বা কর্মকাল শেষ হওয়ায় সেগুলো বাতিল করার একটি প্রজ্ঞাপন দেয়।

মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. কামরুজ্জামানের স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন অন্তত দুইটি তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের পাসপোর্ট দেয়া যেতে পারে।

এরই মধ্যে মঙ্গলবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গুম ও হত্যার সঙ্গে জড়িত ২২ জন এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত এরকম ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে।

আইনজীবী মনিরের ভাষ্য অনুযায়ী, পাসপোর্টের সঙ্গে শুধু ভ্রমণের মৌলিক অধিকার রয়েছে। অন্য কোন সুযোগ সম্পর্কিত নয়। এই বিষয়টি তার অন্যান্য আর্থিক বা অন্য কোন বিষয়কে প্রভাবিত করবে না।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনির বলেন, “পাসপোর্টের সঙ্গে সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশের বাইরে যাওয়া এবং পুনরায় দেশে প্রবেশ করা হলো মৌলিক অধিকার। এটা করার জন্য প্রয়োজন হয় ট্রাভেল ডকুমেন্ট”।

“এর মধ্যে পাসপোর্ট হলো বাংলাদেশের জন্য পৃথিবীতে ভ্যালিড ট্রাভেল ডকুমেন্ট। এখন যদি এটা কারও না থাকে তবে সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে বাইরে যাওয়া বা পুনরায় দেশে প্রবেশ করতে পারবে না” বলেন মনির।

যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ বা মামলা আছে, বিচার চলছে, অনেক সময় তাদের পাসপোর্ট স্থগিত বা বাতিল করা হয়, যাতে তারা দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে না পারে। বিদেশে থাকলেও এটা করা হয়, যাতে তারা স্বাধীনভাবে পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে চলাচল করতে না পারে। তবে, তারা পুনরায় পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।