
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্বে আর রাখা হবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের দশম সভা শেষে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্যান্য চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, গত ২৩ নভেম্বর বিএনপি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) লিখিতভাবে দাবি জানায় যে ইসলামী ব্যাংকসহ সমমনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্ব না দেওয়া হোক। সিইসি নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা ৩৬ দফার একটি প্রস্তাবনা জমা দেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়—নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার হিসেবে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না, যাদের দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বমহলে চিহ্নিত করা হয়। উদাহরণ হিসেবে তারা ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেন।
বিএনপি আরও দাবি করে, ইসলামী ব্যাংকে সম্প্রতি প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগ বাতিল করে এবং শূন্য পদে দ্রুত দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে; তাই এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হবে না।
বিএনপির এই দাবির তিন দিন পরই ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়ার ‘আহ্বান’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেলের (এসজি) দায়িত্ব পালনকারী মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বিএনপির দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অযৌক্তিক এবং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। তার মতে, এসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ দিন ধরে অরাজনৈতিক ও সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং সবাইকে সমানভাবে সেবা দিয়ে সন্তুষ্ট করেছে। তাই তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এরই মধ্যে আরেকটি ঘটনায় নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ইসলামী ব্যাংকের একজন পরিচালকসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদের একটি জুম মিটিংয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে তাকে ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি হিসেবে নির্বাচনে জামায়াতের পক্ষে কীভাবে কাজ করতে হবে—সে বিষয়ে নির্দেশনা দিতে দেখা যায়। ঘটনাটি ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করে।
এসব প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত সকল বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জাতীয় নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।








