মঙ্গলবার ২২ জুলাই, ২০২৫

নিজের ৮০ শতাংশ পুড়েও ২০ শিক্ষার্থীকে বাঁচালেন শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরী

শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী/গ্রাফিক রাইজিং কুমিল্লা

রাজধানীর উত্তরায় গতকাল সোমবার (২১ জুলাই) ঘটে যাওয়া বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কো-অর্ডিনেটর মাহরিন চৌধুরী (৪২)। অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তিনি দাউদাউ করা আগুনের শিখার মধ্যে থেকে প্রায় ২০ জন শিশু শিক্ষার্থীকে অক্ষত অবস্থায় বাইরে নিয়ে আসতে সক্ষম হলেও নিজে আর বেরিয়ে আসতে পারেননি।

গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতেই মারা যান এই মহৎপ্রাণ শিক্ষিকা।

গতকাল বিকেলে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর পরই ভয়াবহ আগুন ধরে যায়। ক্লাসরুমের ভেতর তখনো অনেক শিশু শিক্ষার্থী আটকা পড়েছিল। এই সঙ্কটময় মুহূর্তে নিজের জীবনের পরোয়া না করে মাহরিন চৌধুরী ঝাঁপিয়ে পড়েন শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে। তিনি একের পর এক শিক্ষার্থীদের আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বের করে আনেন। উদ্ধার হওয়া শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের ম্যাডাম বারবার বলছিলেন, “দৌঁড়াও, ভয় পেও না। আমি আছি।” এই কথাগুলোই যেন তাদের চরম বিপদে সাহস জুগিয়েছে।

তবে, এতজন শিক্ষার্থীকে বাঁচানোর পর নিজে সময়মতো বের হতে পারেননি মাহরিন। মারাত্মকভাবে দগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

মাহরিন চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করে তার ভাই মুনাফ মুজিব চৌধুরী এক আবেগঘন ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “মাহরিন আপু আর আমাদের মাঝে নেই। আমার বড় বোন, যিনি আমাকে মায়ের মতো করে বড় করেছেন।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “মাইলস্টোনে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করতেন মাহরিন। আগুন লাগার পর তিনি প্রথমে বের হয়ে আসেননি, বরং যতজন শিক্ষার্থীকে সম্ভব বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ১০০ শতাংশ দগ্ধ হন।” মুনাফ মুজিব চৌধুরী তার বোনের জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন এবং জানিয়েছেন, মাহরিন তার দুই ছেলেকে রেখে চলে গেছেন।

মাহরিনের স্বামী মনসুর হেলাল জানান, মাহরিন তাকে জানিয়েছিলেন যে স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের নিয়ে বের হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই গেটের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। নিজে দগ্ধ হলেও তিনি বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের সব জায়গা পুড়ে গেছে। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া এক সেনাসদস্যও মাহরিনের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে বলেন, “ম্যাডাম ভেতরে ঢুকে বাচ্চাগুলোকে বের করে দিয়েছেন, তারপর উনিই বের হতে পারেননি।”

উল্লেখ্য, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাইলটসহ ২৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও ১৭১ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাহরিন চৌধুরীর এই আত্মত্যাগ তাকে শুধু একজন শিক্ষিকা নয়, একজন প্রকৃত নায়িকা হিসেবে স্মরণীয় করে রাখবে।

আরও পড়ুন