জীবাশ্ম জ্বালানি লবির প্রভাবমুক্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর নতুন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আন্তর্জাতিক ক্লিন এনার্জি দিবস রবিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ-এ জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ মন্তব্য করে সংস্থাটি।
মানববন্ধনে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যমান জ্বালানি মহাপরিকল্পনা অনতিবিলম্বে বাতিলের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পতিত কর্তৃত্ববাদী ও চৌর্যতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতাকাঠামোর অন্যতম ভিত্তি ও সুবিধাভোগী ছিলো দেশি-বিদেশি লবি, যাদের হাতে নীতিকাঠামে জিম্মিদশায় নিমজ্জিত ছিলো। ফলে জ্বালানি মহাপরিকল্পনায় যেমন তাদের স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জিইয়ে রাখা হয়েছে, তেমনি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উত্তরণের সম্ভাবনাকে পদদলিত করা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানিনির্ভর দেশ গঠন করতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির সমর্থকগোষ্ঠীর প্রভাব থেকে নীতিকাঠামোকে মুক্ত করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান, অবিলম্বে স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত বিশেষজ্ঞ ও অংশীজন সম্পৃক্ত করে ২০৫০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়নের সময়াবদ্ধ পথরেখা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করুন।’
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির রূপান্তর সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই প্রথমবার টিআইবি এ দিবসটি উদ্যাপন করেছে, দেশেও এ দিবসটি প্রথমবারের মতোই উদ্যাপিত হচ্ছে। “ক্লিন এনার্জি: টেকসই ভবিষ্যৎ” (Clean Energy for a Sustainable Future) প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে টিআইবি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে দিবসটি উদযাপনে বহুমুখী কর্মসূচি পালন করেছে।
স্থানীয় পর্যায়ে ৪৫টি জেলা ও উপজেলায় টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), অ্যাকটিভ সিটিজেন্স গ্রুপ (এসিজি), ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি সম্পর্কে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের (মানববন্ধন, র্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠান, জনসমাবেশ, পথসভা ইত্যাদি) আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির গুরুত্ব এবং জ্বালানি খাতে সুশাসন নিশ্চিতে ঢাকায় আয়োজিত মানববন্ধনে টিআইবির প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
টিআইবি আয়োজিত এই মানববন্ধনে ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ, কর্মজীবি নারী, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, ইটিআই বাংলাদেশ, কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন (ক্লিন), বিডব্লিইউজিইডি, জেটনেট-বিডি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, দ্য আর্থ সোসাইটি, সিপিআরডি, বিইআই, বিএআরসিআইকে, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ, ক্যাপস, দীপ্ত ফাউন্ডেশন, এমআরডিআই ও পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (প্রাণ) নামক সংস্থাসমূহ অংশগ্রহণ করে।
আন্তর্জাতিক ক্লিন এনার্জি দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে জ্বালানি খাতে সুশাসন নিশ্চিতসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানির রূপান্তরে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে টিআইবির সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিদ্যমান জ্বালানি মহাপরিকল্পনা ‘ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি-২০২৩)’ অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস এবং জ্বালানি মিশ্রণে নবানয়নযোগ্য জ্বালানির পরিমাণ বৃদ্ধি- এমন মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি ও কার্যকর করা; জ্বালানি খাতে নীতি করায়ত্ত বন্ধ এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রতিরোধসহ এ খাত সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় জাবাবদিহি নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা; পরিবেশ আইনের আওতায় বিধিবদ্ধ করে সকল প্রকার জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ত্রুটিমুক্ত পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও যাচাই নিশ্চিত করতে হবে এবং পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান এবং দূষণ ও পরিবেশ-বিষয়ক তদারকিতে স্বচ্ছ ও যথাযথ-প্রক্রিয়া অনুসরণ করা; নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর-সংক্রান্ত কার্যক্রমে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)— কে একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা প্রদানসহ এর কারিগরি, জনবল এবং অবকাঠামোগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।