বুধবার ৩০ জুলাই, ২০২৫

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

Rising Cumilla - Muhammad Yunus
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস | ছবি: পিআইডি

অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, ‘ব্যাপক জাতীয় ঐকমত্য গঠনের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি— যা অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করবে। আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট, একটি এমন সমাজ গঠন করা— যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক যেন শান্তি, মর্যাদা, স্বাধীনতা ও গৌরব নিয়ে বাঁচতে পারে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকালে  জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জাতিসংঘ আয়োজিত ‘জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠান ও ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদনের বাস্তবায়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

এ অনুষ্ঠানকে মানবতার পক্ষে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ আমরা একত্র হয়েছি জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী স্মরণে— যা আমাদের জাতির ইতিহাসে এক গভীর তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। এই দিনে হাজার হাজার বাংলাদেশি নারী-পুরুষ—যাদের অধিকাংশই তরুণ—স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আমাদের দেশের মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধার করেছিল। তাদের সাহস কেবল আমাদের জন্য নয়, সমগ্র মানবতার জন্যই এক বার্তা ছিল।’

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশেষ করে জাতিসংঘের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট পর্যন্ত এবং সর্বশেষ গত বছরের জুলাই-আগস্টের অন্ধকার সময়ে জাতিসংঘ সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরপরই তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনকে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, ‘কারণ, আমরা বিশ্বাস করি— নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য সত্য উদঘাটন কেবল বিচার নয়, বরং নির্মূলের জন্যও অপরিহার্য।’

জাতিসংঘের হাইকমিশনারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাত্র কয়েক সপ্তাহে আনুমানিক ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। এই সহিংসতা ছিল সুসংগঠিত, পূর্বপরিকল্পিত এবং তৎকালীন শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পরিচালিত— বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকার ইতোমধ্যেই ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দণ্ডবিধি সংশোধন করেছি, এবং আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছি। পাশাপাশি জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি, যার মাধ্যমে ঢাকায় একটি সহযোগী মিশন স্থাপন করা হবে।’

এই মিশন সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও নাগরিক সমাজের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে বলে জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দিন থেকেই জাতিসংঘ আমাদের এই রূপান্তরের অংশীদার। আমি মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে তার অবিচল সমর্থন এবং মার্চ মাসে বাংলাদেশ সফরের জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমি হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক, ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিমের সদস্যবৃন্দ, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস এবং আমার প্রিয় বন্ধু মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানকেও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। সংস্কারের পাশাপাশি আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়ও কাজ করছি— যারা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তবে ন্যায়ের অর্থ কেবল শাস্তি নয়। ন্যায় মানে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করা, যেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আর কখনো জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না হয়।’

বক্তব্যের শেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগে গড়ে উঠেছে একটি নতুন বাংলাদেশ—যা আশার ওপর, মানবাধিকারের ওপর, এবং গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের ওপর প্রতিষ্ঠিত।’

তিনি জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে অন্ধকার সময়ে জাতিসংঘ আমাদের পাশে থেকেছে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথেও আমরা এই অংশীদারিত্ব অব্যাহত দেখতে চাই।’

আরও পড়ুন