তীব্র গরমে পুড়ছে জনজীবন। আর এর মধ্যেই দেশজুড়ে বেড়েছে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি। একদিনে যেমন গরমের কারণে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ঘরে থাকা যাচ্ছে না, তেমনি ফসলের ক্ষেতে ঠিকমতো সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ডের মধ্যেও দেশজুড়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। দিনে-রাতে সমান তালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ঠ জনজীবন। পাশাপাশি দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অফিস আদালতে কাজের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
এদিকে, সর্বশেষ গত রবিবার সাবস্টেশন পর্যায়ে ১ হাজার ২৯১ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তবে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ না থাকার পরিমাণ আরো বেশি।
রাজধানীতে তুলনামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বেশি থাকলেও এখানেও লোডশেডিং হচ্ছে। কিন্তু জেলা এবং গ্রামীণ এলাকাগুলোয় দিনের বড় একটা সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। গরমে ও ঘামে কাহিল অবস্থা মানুষের। রাত ১টার পর বিভিন্ন এলাকায় এক ঘণ্টার মতো লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। অনেকেই বলছেন, ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় যেতেই লোডশেডিং হচ্ছে।
তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে মাটির নিচের পানির স্তর নেমে গেছে আরো নিচে। ফলে শুধু শহরে নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে পানির জন্য হাহাকার।
বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবি সূত্র জানায়, সম্প্রতি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন ও ভারত থেকে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি শুরু, পায়রাতে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খোলা বাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরুর ফলে সার্বিকভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নত হয়। চলতি সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুম উপলক্ষ্যে বিশেষ প্রস্তুতিও নেয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু স্মরণকালের সর্বোচ্চ গরমে সে প্রস্তুতিও পুরোপুরি কাজে আসছে না। তাই এলাকাভেদে কমবেশি লোডশেড করতে হচ্ছে। রাজধানী ও শহর এলাকায় লোডশেড কম হচ্ছে। শহর ও গ্রামীণ এলাকায় অপেক্ষাকৃত বেশি করা হচ্ছে।
পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ এপ্রিল রাত ৯টায় দেশে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। তবে ঐ সময় ৩০৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। সেদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল বিকাল ৪টার দিকে ৭৭৬ মেগাওয়াট। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ২৮০ মেগাওয়াট। তবে পরের দিন শুক্রবার পহেলা বৈশাখের ছুটিতে (১৪ এপ্রিল) রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়। সারা দিন তা ওঠানামা করলেও রাত ১১টার পর আবারও লোডশেডিং হাজার মেগাওয়াট ছাড়ায়। এর মধ্যে রাত ৩টায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ঐ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৩২৮ মেগাওয়াট। শনিবার সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দিন ৯৫০ মেগাওয়াট লোডশেড করা হয়। গত রবিবার অফিস খোলার দিন সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে ১ হাজার ২৯১ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয় সাবস্টেশন পর্যায়ে। ঐ দিন ১৫ হাজার ২৭৩ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সাবস্টেশন পর্যায়ে ১৫ হাজার ৯৮২ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হয়। বিতরণ পর্যায়ে প্রায় পৌনে ৮ শতাংশ সিস্টেম লস বিবেচনায় নিলে আরো ১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাননি গ্রাহকরা।
উল্লেখ্য, রবিবার রাতে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে ফেনীর ছাগলনাইয়া বিদ্যুৎ অফিসে হামলা করেছে উত্তেজিত জনতা। তারা বেশ কিছুক্ষণ মহাসড়কও অবরোধ করে রাখে। রমজানে লোডশেডিংয়ের জন্য সাহরি করতে গিয়ে রোজাদাররা যেমন বিপাকে পড়ছেন, একইভাবে তীব্র গরমে ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় মানুষের রাতের ঘুম নষ্ট হচ্ছে।