সোমবার ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

আজকের ভূমিকম্পও আফটারশক কি-না—জানালেন আবহাওয়াবিদ

বিনোদন ডেস্ক

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে ৪ দশমিক ১ মাত্রার এই ভূমিকম্পে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত ২১ নভেম্বর শুক্রবার থেকে ধারাবাহিকভাবে দেশে ভূকম্পন অনুভূত হচ্ছে। সেদিন সংঘটিত ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটিকে গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পগুলোর একটি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ভূতত্ত্ববিদরা। উৎপত্তিস্থল রাজধানীর অত্যন্ত কাছাকাছি হওয়ায় ঢাকাবাসীর উদ্বেগ তখন থেকেই বাড়তে থাকে।

২১ নভেম্বরের শক্তিশালী ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী এলাকায়, যা রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ২৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে। এরপর গত দুই সপ্তাহে ঢাকায় অন্তত সাতবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এসব কম্পনের অধিকাংশের উৎপত্তিও নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় বলে জানা গেছে।

একই এলাকা থেকে বারবার ভূকম্পন অনুভূত হওয়ার বিষয়টিকে আফটারশক হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর–এর ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির।

আজকের ভূমিকম্পের পর তিনি এক গণমাধ্যমকে বলেন, বড় ধরনের ভূমিকম্পের পর সাধারণত একাধিক ছোট ও মৃদু ভূমিকম্প রেকর্ড হয়, যেগুলোকে আফটারশক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভবিষ্যতে আরও কম্পন হতে পারে কিনা—এ বিষয়ে আপাতত নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সংঘটিত সব ভূমিকম্পকেই আফটারশক হিসেবে ধরা হচ্ছে।

তবে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ সতর্ক করে বলছেন, ধারাবাহিকভাবে ছোট ও মাঝারি মাত্রার কম্পন বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনার ইঙ্গিতও হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই ভূতাত্ত্বিকরা সতর্ক করে আসছেন যে বাংলাদেশ একটি সক্রিয় টেকটোনিক প্লেট সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করায় যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাব্য দুটি প্রধান উৎস রয়েছে—

প্রথমত, ডাউকি ফল্ট, যা ভারতের শিলং মালভূমির পাদদেশ থেকে ময়মনসিংহ–জামালগঞ্জ–সিলেট অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার।

দ্বিতীয়ত, সিলেট থেকে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত ভূমিকম্প বলয়, যা সমগ্রভাবে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত বলে ধারণা করা হয়। এই ভূগাঠনিক উৎসকে বিশেষজ্ঞরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন।

গবেষণায় ঢাকার ভূমিকম্প-ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো—
সবুজবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী, উত্তরা, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, মানিকদী, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, খিলগাঁও ও বাড্ডা।

ঢাকার ৩২টি এলাকার ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, অতিরিক্ত জনঘনত্ব, দুর্বল ভবন কাঠামো এবং উদ্ধার কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতার কারণে রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চল তুলনামূলকভাবে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, মানিকদী ও গাবতলী এলাকাও উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সাম্প্রতিক এই ধারাবাহিক ভূকম্পনগুলো বাংলাদেশে সম্ভাব্য বড় ভূমিকম্পের বিষয়ে নতুন করে সতর্কবার্তা দিচ্ছে। যদিও নির্দিষ্ট সময় বা মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না, তবুও প্রস্তুতি ও সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।

আরও পড়ুন