সোমবার ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আগস্টে ৪৫০টিরও বেশি সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৪২৮ জন: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন

লাইফস্টাইল ডেস্ক

RisingCumilla - road accident
সড়ক দুর্ঘটনা/প্রতীকি ছবি/রাইজিং কুমিল্লা

গত আগস্ট মাসে সারা বাংলাদেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে মোট ৫ শতাধিক দুর্ঘটনায় ৪ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে শুধু সড়ক পথেই ঘটেছে ৪৫১টি, যেখানে নিহত হয়েছেন ৪২৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৯১ জন। নিহতদের মধ্যে ৬৮ জন নারী ও ৩৪ জন শিশু রয়েছে। 

এর মধ্যে ১৪৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৩২ জন, যা মোট নিহতের ৩০.৮৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩১.৯২ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৮৩ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৯.৩৯ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫২ জন, ১২.১৪ শতাংশ।

এই সময়ে ১৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত, ১৭ জন আহত এবং ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৩৭টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সংবাদ মাধ্যমে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। ফাউন্ডেশনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায় মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৩২ জন, বাসের যাত্রী ৩০ জন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রলি-লরি আরোহী ২৭ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ২১ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ৯৭ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র) ৩৩ জন এবং বাইসাইকেল আরোহী ৫ জন নিহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২১৪টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৩৫টি আঞ্চলিক সড়কে, ৪২টি গ্রামীণ সড়কে এবং ৬০টি শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলোর ৯০টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০৭টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৮৫টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৬২টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৭টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১১৯টি দুর্ঘটনায় ১১৭ জন নিহত হয়েছেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ১৮টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় ৩৬টি দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। এই জেলায় ৬টি দুর্ঘটনায় এক জন নিহত হয়েছেন। রাজধানী ঢাকায় ৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে— ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; ত্রুটিপূর্ণ সড়ক; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে।

সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

আরও পড়ুন