বুধবার ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

অ্যালার্জি কী? লক্ষণ ও প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

রাইজিং কুমিল্লা অনলাইন

Rising Cumilla -allergy
অ্যালার্জি কী? লক্ষণ ও প্রতিরোধ করবেন যেভাবে/প্রতীকি ছবি/সংগৃহীত

অ্যালার্জি হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার (ইমিউন সিস্টেম) এমন একটি প্রতিক্রিয়া, যা আসলে ক্ষতিকর নয় এমন বস্তুর প্রতি দেখানো হয়। এই নিরীহ বস্তুগুলোকেই বলা হয় অ্যালার্জেন। উদাহরণস্বরূপ—পোলেন (গাছের রেণু), মৌমাছির বিষ, পোষা প্রাণীর লোম, কিছু খাবার বা ওষুধ অ্যালার্জেন হতে পারে।

সাধারণত আমাদের ইমিউন সিস্টেম ক্ষতিকর জীবাণু বা বস্তুকে আক্রমণ করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। কিন্তু অ্যালার্জির ক্ষেত্রে, এই অ্যান্টিবডিগুলো ভুল করে কোনো নির্দোষ বস্তুকেও বিপজ্জনক ভেবে আক্রমণ করে। এর ফলস্বরূপ শরীরে প্রদাহ, চুলকানি, হাঁচি-কাশি বা হজমের সমস্যা দেখা দেয়।

অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম—কেউ অনুভব করেন হালকা অস্বস্তি, আবার কারও ক্ষেত্রে এটি অ্যানাফাইল্যাক্সিস নামে প্রাণঘাতী অবস্থাও হতে পারে। যদিও অ্যালার্জি পুরোপুরি সারানো যায় না, তবে সঠিক চিকিৎসায় এর উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

অ্যালার্জির সাধারণ উপসর্গ

অ্যালার্জির লক্ষণ নির্ভর করে কোন অ্যালার্জেন এর জন্য দায়ী এবং শরীরের কোন অংশে তা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে (শ্বাসনালি, ত্বক, সাইনাস বা হজমতন্ত্র)।

অ্যালার্জির ধরনসাধারণ উপসর্গসমূহ
হে ফিভার (অ্যালার্জিক রাইনাইটিস)* হাঁচি, নাক বন্ধ বা পানি পড়া। * নাক, চোখ বা মুখে চুলকানি। * চোখ লাল, পানি পড়া বা ফুলে যাওয়া। * ক্লান্তি।
খাবারে অ্যালার্জি* মুখে ঝিমঝিম ভাব। * ঠোঁট, জিহ্বা, মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া। * চুলকানি বা হাইভস (লাল দাগ)। * পেট ব্যথা, বমি বা ডায়রিয়া। * গুরুতর ক্ষেত্রে অ্যানাফাইল্যাক্সিস।
পোকামাকড়ের কামড়ে অ্যালার্জি* কামড়ের স্থানে ব্যথা ও ফুলে যাওয়া। * শরীরজুড়ে চুলকানি বা ফুসকুড়ি। * বুকের চাপ, কাশি বা শ্বাসকষ্ট। * গুরুতর ক্ষেত্রে অ্যানাফাইল্যাক্সিস।
ওষুধে অ্যালার্জি* ত্বকে র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি, মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়া। * শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরা। * বমি বা ডায়রিয়া। * অ্যানাফাইল্যাক্সিস।
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস (একজিমা)* ত্বকে তীব্র চুলকানি। * লালচে বা বাদামি দাগ। * ত্বক শুষ্ক, খোসা ওঠা বা ফেটে যাওয়া।

অ্যানাফাইল্যাক্সিস: 

কিছু খাবার, পোকামাকড়ের কামড় বা ওষুধে অত্যন্ত গুরুতর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যাকে বলা হয় অ্যানাফাইল্যাক্সিস। এটি দ্রুত জীবনহানিকর অবস্থায় রূপ নিতে পারে।

অ্যানাফাইল্যাক্সিসের জরুরি লক্ষণ:

  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
  • রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া।
  • শ্বাস নিতে তীব্র কষ্ট হওয়া।
  • ত্বকে লাল দাগ বা হাইভস।
  • মাথা ঘোরা, দুর্বলতা।
  • বমি বা ডায়রিয়া।
  • ভয় বা আতঙ্কের অনুভূতি।

অ্যালার্জির কারণ ও ঝুঁকির কারণ

অ্যালার্জি সৃষ্টি হয় যখন শরীর কোনো নির্দোষ বস্তুকে ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে। পরবর্তীতে সেই একই বস্তুর সংস্পর্শে এলেই অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দেয়।

সাধারণ অ্যালার্জির কারণসমূহ:

  • বাতাসে থাকা অ্যালার্জেন: পোলেন, ধুলা, ছত্রাক বা প্রাণীর লোম।
  • কিছু খাবার: চিনাবাদাম, গাছের বাদাম, মাছ, ডিম, দুধ, সয়াবিন, গম ইত্যাদি।
  • পোকামাকড়ের কামড়: যেমন—মৌমাছি, বোলতা।
  • কিছু ওষুধ: বিশেষত পেনিসিলিন জাতীয় ওষুধ।
  • ত্বকের সংস্পর্শে অ্যালার্জেন: ল্যাটেক্স বা কিছু বস্তু।

ঝুঁকির কারণ:

  • পরিবারে অ্যালার্জি বা হাঁপানির ইতিহাস থাকা।
  • শিশু বয়সে থাকা।
  • হাঁপানি বা অন্য অ্যালার্জিক সমস্যা আগে থেকেই থাকা।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

  • যদি মনে হয় আপনার উপসর্গগুলো অ্যালার্জি থেকে হচ্ছে এবং বাজারে পাওয়া সাধারণ ওষুধে কাজ হচ্ছে না।
  • যদি নতুন কোনো ওষুধ খাওয়ার পর উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত সেই চিকিৎসককে জানাতে হবে যিনি ওষুধটি দিয়েছেন।
  • যদি অ্যানাফাইল্যাক্সিস হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় জরুরি নম্বরে ফোন করুন। এ অবস্থায় দ্রুত ইপিনেফ্রিন (EpiPen) ইনজেকশন দিতে হয়। ইনজেকশন দেওয়ার পর উপসর্গ কমলেও অবশ্যই হাসপাতালে যাওয়া উচিত, যাতে চিকিৎসক নিশ্চিত হতে পারেন প্রতিক্রিয়া ফিরে আসছে না।
  • যাদের আগে এমন গুরুতর প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তাদের অ্যালার্জি পরীক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা পরিকল্পনার জন্য অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত।

প্রতিরোধ ও জটিলতা

প্রতিরোধ ও করণীয়:

  • অ্যালার্জি প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো অ্যালার্জেনগুলো এড়িয়ে চলা। যেমন, পোলেন অ্যালার্জি থাকলে ফুলের সময় জানালা বন্ধ রাখা।
  • ধুলা-মাইট অ্যালার্জি থাকলে নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করুন ও বিছানার চাদর ধুয়ে ফেলুন।
  • অ্যালার্জির উপসর্গ কখন বাড়ে তা বুঝতে একটি ডায়েরি রাখুন।
  • যদি গুরুতর অ্যালার্জি থাকে, তাহলে মেডিকেল অ্যালার্ট ব্রেসলেট পরুন, যাতে জরুরি অবস্থায় অন্যরা সাহায্য করতে পারে।

অ্যালার্জির সম্ভাব্য জটিলতাসমূহ:

  • অ্যানাফাইল্যাক্সিস: গুরুতর ও প্রাণঘাতী অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া।
  • হাঁপানি: অ্যালার্জির কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যাওয়া।
  • ইনফেকশন: সাইনাস, কান বা ফুসফুসে ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া।

 

 

সূত্র : Mayo Clinic

আরও পড়ুন