জুন ১, ২০২৫

রবিবার ১ জুন, ২০২৫

অর্থনীতির সংস্কার ও জলবায়ু সহনশীলতায় জাপানের বিশাল সমর্থন

Rising Cumilla -Japan's huge support for economic reform and climate resilience
ছবি: সংগৃহীত

অর্থনীতির সংস্কারকে এগিয়ে নেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সরকারি কর্মকর্তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

আজ (৩০ মে) জাপানের রাজধানী টোকিও – তে আজ (৩০ মে) চুক্তি দু’টি স্বাক্ষর করা হয়। জাইকা’র প্রেসিডেন্ট ড. তানাকা আকিহিকো ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী ‘অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু সহনশীলতা শক্তিশালীকরণে উন্নয়ন নীতি ঋণ চুক্তি’ এবং ‘২০২৫ সালের জেডিএস স্কলারশিপ নিয়ে অনুদান চুক্তি’ – দু’টিতে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি সরকারি সফরে বর্তমানে
জাপানে অবস্থান করছেন। ঋণ ও অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরের আগে জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ‘এক্সচেঞ্জ অব নোটস’ (ই/এন) স্বাক্ষর করা হয়।

ইউক্রেন সংকটের কারণে মূল্যস্ফীতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো নানা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের সংকট মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ। ‘অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু সহনশীলতা শক্তিশালীকরণে উন্নয়ন নীতি ঋণ’ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বাজেটরি সাপোর্ট প্রদান করা হবে।

এই ঋণের লক্ষ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু সহনশীলতা জোরদারকরণে গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়তা করা।

প্রোগ্রামটি ৬০ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন (সহজ শর্তে) বা প্রায় ৪২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে সম্মত নীতিমালার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় নীতিগত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সহায়তা দেবে। ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশ উন্নয়ন এবং শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাঠামোগত সংস্কারও প্রত্যাশা করা হবে। স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানসমূহ ও সরকারি অর্থ ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধির নীতিমালার মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিতে ভূমিকা রাখা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধির নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এই কর্মসূচির আওতায় কিছু নীতিগত পদক্ষেপ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিশ্বব্যাংকের সহ-অর্থায়ন ব্যবস্থার অধীনে বাস্তবায়িত হবে, যার মধ্যে এডিবি অর্থনৈতিক সংস্কারে এবং বিশ্বব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা করবে।

অন্যদিকে, জেডিএস স্কলারশিপ (জাপানিজ গ্র্যান্ট এইড ফর হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ) প্রোগ্রামের আওতায় সম্ভাবনাময় তরুণ সরকারি কর্মকর্তাদের জাপানের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ দেওয়া হবে। জেডিএস বৃত্তিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বাংলাদেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে অবদান রাখবেন। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি তারা জাপানের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, খাদ্য ও পরিবেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবেন।

জেডিএস স্কলারশিপ অনুদান চুক্তির আওতায়, মোট ৬০৬ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন (প্রায় ৪.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) অর্থায়নে ৩৩ জন সরকারি কর্মকর্তাকে জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বৃত্তি প্রদান করা হবে। ৩৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জন মাস্টার্স এবং ৩ জন পিএইচডি পর্যায়ে অধ্যয়নের সুযোগ পাবেন।

২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫৯১ জন বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তা জেডিএস স্কলারশিপ লাভ করেছেন।

ঋণ ও অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরের আগে, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি ও জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী এ প্রকল্পগুলোর জন্য এক্সচেঞ্জ অব নোটস (ই/এন) স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আরও পড়ুন