
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতি সন্তান ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাত ১০টা ১২ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তার মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসমাইল সাদী। তিনি বলেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে আহমদ রফিক বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। গতকাল তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আজ রাতে তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে মারা যান তিনি।
বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, মৃত ঘোষণা করার সাত মিনিট আগে তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।
এদিকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আগামীকাল সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কবিতা পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছে।
আহমদ রফিক দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। কিডনির সমস্যা ছাড়াও তিনি একাধিক মাইল্ড স্ট্রোকের শিকার হন। চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তাকে ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২৯ সেপ্টেম্বর বারডেমে স্থানান্তর করা হয়। তিনি তখন থেকেই সংজ্ঞাহীন ছিলেন এবং অক্সিজেন সাপোর্টে ছিলেন।
আহমদ রফিকের জন্ম ১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। একাধারে কবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক, ভাষাসংগ্রামী ও রবীন্দ্রচিন্তাবিদ হিসেবে তিনি দুই বাংলাতেই সমাদৃত ছিলেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকা এই মনীষী একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করে।
তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজ ভাবনা—বহুমাত্রিক চিন্তাধারায় নির্মিত ছিল তাঁর লেখনী।
আহমদ রফিক নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরের একটি ভাড়া বাসায় একাই বসবাস করতেন। ২০০৬ সালে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি নিঃসন্তান ও একাকী জীবনযাপন করতেন। তার একমাত্র সঙ্গী ছিল বই—নিজের লেখা ও সংগ্রহ করা অগণিত বইপত্র।
২০১৯ সাল থেকে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে, ২০২৩ সাল নাগাদ প্রায় দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন। ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যাওয়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।









