ডিসেম্বর ৯, ২০২৪

সোমবার ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

ব্রাহ্মণপাড়ায় তেঁতুল চায়ের স্বাদ নিতে ছুটে আসছেন মানুষ

ব্রাহ্মণপাড়ায় তেঁতুল চায়ের স্বাদ নিতে ছুটে আসছেন মানুষ
ব্রাহ্মণপাড়ায় তেঁতুল চায়ের স্বাদ নিতে ছুটে আসছেন মানুষ। ছবি: প্রতিনিধি

তেঁতুল, কাঁচামরিচ ও চা-পাতা দিয়ে চা তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন মোহাম্মদ হাসান মোল্লা নামের এক চা বিক্রেতা। এ চা বিক্রি হয় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। তেঁতুলের সঙ্গে কাঁচামরিচ মিশ্রিত সুস্বাদু এ চায়ের স্বাদ পরখ করতে প্রতিদিন দোকানটিতে আসছেন নানা বয়েসি চা-প্রেমী মানুষ।

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনের হাসান মোল্লার টং দোকানটি তেঁতুল চায়ের জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দোকানে প্রতিদিন ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার শুধু এই তেঁতুল চা বিক্রি হয় তার।

দোকানি মোহাম্মদ হাসান মোল্লা (৫৩) উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহালক্ষীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি কাজের ফাঁকে ফাঁকে শোনালেন জনপ্রিয় হয়ে ওঠা তার তেঁতুল চায়ের গল্প।

তিনি জানান, একসময় তিনি ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করতেন। সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে তিনি কিছুদিন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায় জড়িত হন। তবে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায় তিনি আশানুরূপ ভালো করতে পারেননি।

পরে গত ৭ বছর আগে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে ছোট টং দোকান দেন তিনি। দোকানে রং চা বিক্রির পাশাপাশি পাউরুটি, বিস্কুট, জুস, চিপস, মিনারেল ওয়াটার, কলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।

তবে তার দোকানের আশেপাশে আরও কয়েকটা চায়ের দোকান থাকায় আশানুরূপ আয় হচ্ছিল না তার। স্ত্রী, সন্তান ও মাসহ ৬ সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল তার।

তবে গত একবছর আগে তার এক কাছের বন্ধুর পরামর্শে তিনি তার দোকানে অভিনব এই তেঁতুল চায়ের বাড়তি আইটেম যোগ করেন। প্রথম প্রথম তেঁতুল চা কেউ খেতে চাইতো না। তবে তিনি থেমে যাননি। কিছুদিনের মধ্যেই তার তেঁতুল চায়ের সুনাম ছড়াতে শুরু করে।

এরপর মাসখানেকের মধ্যে তার তেঁতুল চা এ উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলা ও কুমিল্লা নগরীর মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে তার তেঁতুল চায়ের স্বাদ নিতে ছুটে আসছেন নানা বয়েসি চা-প্রেমী মানুষ। এখন তিনি সপরিবারে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছেন।

তেঁতুল চা কীভাবে তৈরি করেন তা জানতে চাইলে হাসান মোল্লা বলেন, চা-পাতা দিয়ে জ্বালানো পানির সঙ্গে পরিমাণমতো তেঁতুল, চিনি ও লবণ দিয়ে এই সুস্বাদু তেঁতুল চা তৈরি করি।

পরে কাঁচের গ্লাসে করে তা পরিবেশন করি। তবে এখানে সঠিক পরিমাণ মিশ্রণ জরুরি, না-হয় প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাবে না। স্বাদযুক্ত তেঁতুল চা তৈরি করার জন্য সঠিক মিশ্রণ বুঝতে আমাকে এর পেছনে বেশ কয়দিন সময় দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতি কাপ তেঁতুল চা ১৫ টাকা করে বিক্রি করি। কেউ কেউ খুশি হয়ে বকশিসও দিয়ে যান। এতে আমার তেঁতুল চাসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে প্রতিমাসে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। এতে আমি আমার পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই আছি।

চা খেতে আসা আমিরুল ইসলাম বলেন, মোল্লার দোকানে আমি প্রায় প্রতিদিনই আসি তেঁতুল চা খেতে। এ উপজেলায় সচরাচর পট বা গাভীর দুধের চা ও রং চা পাওয়া যায়। তবে মোল্লার দোকানের তেঁতুল চা ব্যতিক্রম হওয়ায় এবং এ চায়ের ভিন্ন স্বাদের কারণে এ চা খেতে আসি।

চা খেতে আসা শিহাব উদ্দিন নামে অন্য একজন বলেন, আমি পার্শ্ববর্তী বুড়িচং উপজেলা থেকে মাঝে মাঝে এ দোকানে সবান্ধবে চা খেতে আসি। এ চায়ের স্বাদটা আমার ভালো লাগে।

তেঁতুল চায়ের ভেষজ গুণ সম্পর্কে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক সোহেল রানা বলেন, তেঁতুল খেলে শরীরের রক্ত পানি হয়ে যায় এরকম একটি ভুল ধারণার প্রচলন আছে। সবকিছুরই ভালো ও মন্দ দিক রয়েছে। তবে তেঁতুলের উপকারিতা এবং উপকারিতা দুটোই রয়েছে। তবে ক্ষতির দিক থেকে তেঁতুলের ভালোর দিকই বেশি।

সোহেল রানা বলেন, তেঁতুল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। হজম শক্তি বাড়াতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। তেঁতুল ওজন কমাতে সাহায্য করে। পেপটিক আলসার রোধে সহায়ক। তেঁতুল হৃদ্‌যন্ত্র ঠিক রাখে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। শরীরের ক্ষতস্থান সারাতে তেঁতুল বেশ উপকারী।

এছাড়াও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, সর্দি-কাশি, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, লিভার সুরক্ষিত রাখাসহ আরও নানা উপকারে তেঁতুলের বেশ ভূমিকা রয়েছে।