
পর্যটকদের দীর্ঘ ৯ মাসের অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে। অবশেষে আগামী শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে সৌন্দর্যে ঘেরা প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন্সে শুরু হতে যাচ্ছে চলতি মৌসুমের প্রথম পর্যটকদের ভ্রমণ। তবে এই ভ্রমণ হবে কঠোর সরকারি নিয়মের বেড়াজালে সীমিত।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নভেম্বর মাসজুড়ে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপে পর্যটকদের দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে হবে। আপাতত রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকছে না। এই ঘোষণার পরও দ্বীপের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসাকেন্দ্র গুছিয়ে নিতে শুরু করেছেন, আশায় বুক বাঁধছেন।
পর্যটকরা দ্বীপে গিয়ে বড়জোর দুই ঘণ্টা অবস্থান করতে পারবেন বলে জানা গেছে। এই সামান্য সময়ের মধ্যেই চলবে ব্যবসা-বাণিজ্য। তবুও এই স্বল্প সময়ের ব্যবসা নিয়েও আশায় বুক বাঁধছেন ব্যবসায়ীরা। তবে একটি আশার খবর হলো, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে এই দ্বীপে অনধিক দুই হাজার পর্যটক রাত্রিযাপনের সুযোগ পাবেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা অপর্যাপ্ত জেটির কারণে পর্যটকদের ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাই আগে ব্যবহৃত একটি জেটি পুনরায় চালু করার জন্য তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, সেন্ট মার্টিন্সে পর্যটন মৌসুম শুরুর মাত্র একদিন বাকি থাকলেও দ্বীপের একমাত্র জেটির সংস্কারকাজ এখনো শেষ হয়নি। জেটিটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি।
এই দ্বীপে পর্যটক পরিবহনের নৌযানগুলোকে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ছাড়াও বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। এবারও পর্যটকবাহী নৌযানগুলো কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে।
তবে এই ঘাট দিয়ে সেন্ট মার্টিনগামী পর্যটকবাহী নৌযান ছাড়ার বিষয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, “সরকারি নির্দেশনা অনুসারে, ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটক জাহাজ চলাচল শুরু করা হবে। তবে কক্সবাজারের দিক থেকে জাহাজ চলাচলের পয়েন্ট বিআইডব্লিউটিএ ঘাট নির্ধারণ করা হয়েছে।”
পর্যটকদের জন্য সরকারের ১২টি কঠোর নির্দেশনা:
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সেন্ট মার্টিন্স ভ্রমণে পর্যটকদের জন্য ১২টি কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে, যা অবশ্যই মানতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- বিআইডব্লিউটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি পাবে না।
- পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
- ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।
- প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করতে পারবেন না।
- রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
- কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, এবং সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষেধ।
- সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
- নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না। এছাড়া একবার ব্যবহারের প্লাস্টিক যেমন, চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
- পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।









