জুলাই ৩, ২০২৫

বৃহস্পতিবার ৩ জুলাই, ২০২৫

জুনে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৯৬ জনের প্রাণহানি, প্রতিদিন গড়ে নিহত ২৩

ছবি: সংগৃহীত

জুন মাসে সারাদেশে ৬৮৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৯৬ জন নিহত এবং ১৮৬৭ জন আহত হয়েছেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে প্রতিদিন গড়ে ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, যা মে মাসের তুলনায় ২২.৫৫ শতাংশ বেশি। এই উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান আজ বুধবার (০২ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে জুন মাসের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ফাউন্ডেশনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২২৮ জন। এই সময়ে ১৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত, ১৩ জন আহত হয়েছেন। ৫৩টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২২৮ জন, বাসের যাত্রী ৬৩ জন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রলি-লরি-ড্রাম ট্রাক-রোড রোলার আরোহী ৫৪ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস আরোহী ২২ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ১৫১ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম) ৪৪ জন এবং বাইসাইকেল-রিকশা আরোহী ১৪ জন নিহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২৯৬টি জাতীয় মহাসড়কে, ২৪৩টি আঞ্চলিক সড়কে, ৫৯টি গ্রামীণ সড়কে, ৮৭টি শহরের সড়কে এবং ৪টি অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলোর ১৬৭টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩০৬টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১২৪টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৭৬টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৬টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ১২৪৩টি। এর মধ্যে বাস ২১৩টি, ট্রাক ১৮০টি, কাভার্ডভ্যান ৩০টি, পিকআপ ৩৭টি, ট্রাক্টর ১১টি, ট্রলি ১৬টি, লরি ৭টি, ড্রাম ট্রাক ১৯টি, পুলিশ ভ্যান ২টি, তেলবাহী ট্যাংকার ২টি, রোড রোলার ১টি, মাইক্রোবাস ৩১টি, প্রাইভেটকা ৪৪টি, অ্যাম্বুলেন্স ৭টি, জিপ ২টি, মোটরসাইকেল ২৭১টি, থ্রি-হুইলার ২১৯টি, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৯৫টি, বাইসাইকেল-রিকশা ২৭টি এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২৯টি।

বিভাগওয়ারী দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি:

ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৯.৩১ শতাংশ, প্রাণহানি ২৬.৮৬ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.২৩ শতাংশ, প্রাণহানি ১৫.৬৬ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৭.৪১ শতাংশ, প্রাণহানি ১৬.২৩ শতাংশ; খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৩০ শতাংশ, প্রাণহানি ১০.৭৭ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৯৫ শতাংশ; প্রাণহানি ৫.৬০ শতাংশ; সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৩.৯১ শতাংশ, প্রাণহানি ৩.৫৯ শতাংশ; রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৪৪ শতাংশ, প্রাণহানি ১১.৩৫ শতাংশএবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৪০ শতাংশ, প্রাণহানি ৯.৯১ শতাংশ ঘটেছে।

এরমধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২০২টি দুর্ঘটনায় ১৮৭ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২৭টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় ৩৪টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। এই জেলায় ৬টি দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনার কারণ ও সুপারিশ:

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মানসিকতা, অপর্যাপ্ত বেতন-কর্মঘণ্টা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ-র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে চিহ্নিত করেছে।

এসব দুর্ঘটনা রোধে নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়েছে:

  • দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি এবং চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা।
  • বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
  • পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের জন্য ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
  • মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে সেগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস রোড তৈরি করা।
  • পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা।
  • গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা।
  • রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমানো।
  • টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
  • সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করা।
আরও পড়ুন