বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মাছের মেলা। দূর-দুরান্ত থেকে আসা হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার কলরবে মুখরিত হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ।
রবিবার (১৪ এপ্রিল) সকাল থেকে বিভিন্ন জাতের বড় আকারের মাছ সাজিয়ে বসেন মাছ বিক্রেতারা।
শতবর্ষী এ মেলার আয়োজন করা হয় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোগলটুলি এলাকায় রাজগঞ্জ বাজারে। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে বৃহত মাছের বাজার, মাছের মেলা। যেখান থেকে এ অঞ্চলের মানুষ খুঁজে পায় তরতাজা মাছের স্বাদ।
এ বছর কুমিল্লা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৫ শতাধিক বিক্রেতা বিভিন্ন সাইজের মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন। এ বছর ১৫ হাজার মণ মাছ বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। যার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে আয়োজকেরা জানান, ‘নববর্ষের দিন থেকে এক সপ্তাহ ধরে চলবে মেলা। ৫ কেজি থেকে ২০ কেজি ওজনের কাতল, রুই মাছ উঠেছে এবারের মাছের মেলায়, অন্য মাছের সরবরাহও রয়েছে প্রচুর। রাজগঞ্জ বাজার থেকে এ মাছের মেলার পরিধি বাড়ে চারদিকে অর্ধ কিলোমিটার পর্যন্ত। ভোর থেকে তাজা এবং জীবন্ত মাছ নিতে বাজারে ভিড় করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ।’
নববর্ষের প্রথম দিন মাছের মেলায় গিয়ে দেখা গেছে ৫ থেকে ১০ কেজির মাছ বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে পাঁচশত টাকা কেজি দরে। দশ কেজির ওপরের সাইজের মাছ বিক্রি হচ্ছে আটশত টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি দরে।
ঐতিহ্য ও বিশেষত্বের জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জের বৈশাখী মাছের মেলাটি। যুগ যুগ ধরে বৈশাখী মাছের মেলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে গ্রামগঞ্জের মৎস্য ব্যবসায়ীরা। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে রাজগঞ্জ মৎস্য বাজারের ভেতর ছাপিয়ে মাছের মেলা স্থান করে নেয় এক সময়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের দুপাশে মোগটুলির পূর্বদিকের মোরগবাজার, থানা রোড হয়ে পশ্চিমদিকে প্রধান ডাকঘর পর্যন্ত প্রায় অর্ধ কিলোমিটার এলাকা।
এ বিষয়ে মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখ ঘিরে মাছের চাহিদা অনেক বেড়েছে। রাজগঞ্জ বাজার মাছ বিক্রেতা আবু বকর বাসসকে বলেন, আমরা সব ধরনের মাছ নিয়ে এসেছি। নববর্ষ উপলক্ষে সবাই বড় মাছটাই বেশি কিনেন। মাছের দাম একটু বেশি থাকায় আমরাও কিছুটা দাম বেশি চাচ্ছি।
এ বিষয়ে জহির হোসেন নামে এক মাছ ক্রেতা বাসসকে জানান, মেলায় নানা জাতের বড় আকারের মাছ উঠলেও দাম বেশ চড়া।
বিক্রেতাদের সঙ্গে দরাদরি করে মাছ কিনে নিতে হচ্ছে। তার পরে-ও সবাই সাধ্য মতো মাছ ক্রয় করছেন। অপর ক্রেতা মহাব্বত আলী বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে প্রতি বছর মাছের মেলা বসে পুরো রাজগঞ্জ বাজার জুড়ে। নববর্ষে উপলক্ষে বড়বড় বিভিন্ন জাতের মাছ দেখা যায়। যে যার মতো করে বাজার ঘুরে দাম দেখা মাছ ক্রয় করছেন।
এ বিষয়ে রাজগঞ্জ বাজারের ইজারাদার গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘রাজগঞ্জ বাজারটি অনেক পুরাতন এবং বেশ বড় বাজার। নববর্ষ উপলক্ষে মাছের মেলা জমে উঠেছে। ব্যবসায়ীরাও ভালো ব্যবসা করছেন। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাছ আসে এখানে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনা এবার অনেক বেশি। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মেলায় এসেছে। উৎসবমুখুর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ তাদের সাধ্যমতো মাছ কিনে নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে।’