ডিসেম্বর ১০, ২০২৪

মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

আজ এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী, ফিরে দেখা এরশাদের ‘৯ বছর শাসনামল ও উন্নয়ন’

Today is Ershad's death anniversary, look back at Ershad's '9 years of rule and development'
আজ এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী, ফিরে দেখা এরশাদের ‘৯ বছর শাসনামল ও উন্নয়ন’। ছবি: সংগৃহীত

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার (১৪ জুলাই)। ২০১৯ সালের এই দিনে তিনি ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান।

এরশাদ নেই, কিন্তু এরশাদের উন্নয়নের সূচিত ধারা আজও আছে। হয়ত এই উন্নয়নের ফলক থেকেই অনুপ্রাণিত হবে তার দল, নেতা-কর্মী, সমর্থক আর হাজারো এরশাদ ভক্ত। দীর্ঘ নয় বছর দেশ শাসন করা এরশাদ ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। যা পরবর্তীতে বেশ কিছু উপদলে বিভক্ত হয়।

ব্যক্তিগত জীবন, রাজনীতি এবং শাসনকাল ঘিরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচিত-সমালোচিত এরশাদকে সাধারণ মানুষ কি মনে রাখবে? ‘আটষট্টি হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’ বাক্যের প্রবক্তার নয় বছরের শাসনে কী কী উন্নয়ন হয়েছিল, তা জানা দরকার।

এরশাদের শাসনামলে যেসব উন্নয়ন হয়েছিল

দেশে ৬৪ জেলা ও ৪৬০টি উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হয় এরশাদের শাসনকালে। ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় প্রথম শেলটার বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। গুচ্ছগ্রামের (বর্তমানের আশ্রয়ণ) ধারণা তিনি প্রথম প্রবর্তন করেন। পুরোনো বিমানবন্দরে প্যারেড স্কয়ার নির্মাণ হয় তার সময়ে।

গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম তার সময় বিস্তৃতি লাভ করে। সারা দেশে উপজেলা ভবন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ ও উপজেলার ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হয় তার সময়ে। প্রত্যেক উপজেলায় ১৭ জন অফিসার নিয়োগ ও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ তিনি করেন। বারডেম হাসপাতাল তার সময় প্রতিষ্ঠা পায়। রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা তার হাতে নির্মিত। ফার্মগেট খামারবাড়ি নির্মিত হয় তার আমলে। গাজীপুরে ধান ও চাল গবেষণা কেন্দ্র হয় তার সময়ে।

তিস্তা বাঁধ তৈরি করেন, ত্রিমোহনি সেতু নির্মাণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ঘটাতে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধের নকশা অনুযায়ী নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। বর্তমানের পোশাকশিল্প তার সময় বিকশিত হয়। ঢাকায় প্রথম বেবি হোম তার অনুপ্রেরণায় তৈরি।

এরশাদ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর প্রভাতি সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালু করেন। রাজশাহী বিমানবন্দর চালু হয় তার সময়ে। ওয়ারীতে সুইপারদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করেন তিনি। তার সময়ে নির্মিত হয় মতিঝিল সেনাকল্যাণ ভবন। সন্তোষে বেগম ও ভাসানীকে বাড়ি তৈরি করে দেন তিনি।

দেশের প্রথম বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করেন এরশাদ। শিশুদের সাংস্কৃতিক মেধার বিকাশে পথকলি ও নতুন কুঁড়ি তার অবদান।

সিলেটের ওসমানী মেডিকেল হাসপাতাল, ওসমানী বিমানবন্দরসহ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় তার হাতে তৈরি। যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বর্তমান বঙ্গবন্ধু সেতুর মাস্টারমাইন্ড তিনি। বুড়িগঙ্গা, কাঞ্চন, হালদা, মেঘনা, গোমতি, কর্ণফুলি, রুপসা, ২য় বুড়িগঙ্গা, টঙ্গি ব্রিজসহ মোট ৪৩টি বড় বড় ব্রিজ এবং উত্তরবঙ্গসহ সারা দেশে উন্নতমানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা হয় তার শাসনকালে।

এরশাদের আমন্ত্রণে রানি এলিজাবেথ ও চীনের প্রেসিডেন্ট প্রথম এ দেশে আসেন। তার শাসনকালে বিশ্বের প্রভাবশালী প্রেসিডেন্টরা এ দেশে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। তিনি আমেরিকার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করে সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণের সুযোগ পেয়েছিলেন। এছাড়া তিনি ভারতের মতো দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাতিসংঘের শান্তিমিশনে প্রথম সেনা প্রেরণ করেন।

আমেরিকান দূতাবাসকে জায়গা দিয়ে বিদেশি দূতাবাসগুলোকে প্লট বরাদ্দের পদ্ধতি চালু করেন এরশাদ। তিনি আহসান মঞ্জিলকে নতুন রূপে সাজিয়েছেন। ডাক্কাকে ঢাকা নামকরণ করেছেন এরশাদ। ঢাকা বিমানবন্দরে ভিভিআইপি টার্মিনাল তার হাতে তৈরি। ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট মাঠে ঈদের জামাত শুরু করেন।

বাংলাদেশের বাণিজ্য জাহাজগুলোতে দেশের পতাকা প্রথম উড়িয়েছিলেন। রাজশাহী বিমানবন্দর তার হাতে পুনরায় আধুনিকায়ন হয়। সিলেট ও চিটাগং বিমানবন্দরকে বর্তমান রূপ তিনি দিয়েছেন। রেলওয়েকে দুইটি বিভাগে তিনি ভাগ করেছেন। তার সময়ে ৩০টি ইঞ্জিন, ১০৬টি যাত্রী বগি ও এক হাজার ২৫৫টি মালবগি রেলওয়েতে যোগ হয়েছিল। সারা দেশে ২৭৭টি রেলস্টেশন আধুনিকায়ন করা হয় তার আমলে। ৩য় শ্রেণি অবধি ফ্রি বই তিনি শুরু করেছিলেন। তার শাসনামলের প্রথম দুই বছরে দেশে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়।

বাংলাদেশে প্রথম আইএসডি টেলিফোন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তার শাসনামলে দেশে প্রথম সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করেন। শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান আধুনিক ডিজাইনের রূপকার তিনি।

মুজিবনগর স্বাধীনতা সৌধ নির্মাণ, ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান আদলে ফিরে আসার সূচনা তার সময়ে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সংস্কারেও তার অবদান রয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনের স্থাপত্য প্রকৌশলী লুই আই কানের নকশা অনুযায়ী সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ সমাপ্ত করেন তিনি।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এরকম ৩৭৭টি বড় বড় কাজ তার নামে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে। এছাড়া আরও হাজারো স্থাপনা, ব্রিজ, ছোট ছোট সেতু, কালভার্ট তৈরি হয়েছে এরশাদের নয় বছরের শাসনামলে। এতকিছুর মধ্য দিয়ে এরশাদ এই দেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সূচনা করেছিলেন। সেই পথ ধরেই একের পর এক রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।