
চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের শুরু থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় প্রবাহে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে দেশে এসেছে মোট ৮৮৫ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের (জুলাই–১৩ অক্টোবর ২০২৪) ৭৫৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের তুলনায় ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
শুধু অক্টোবরের প্রথম ১৩ দিনেই দেশে এসেছে প্রায় ১.২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১২৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স, যা টাকায় দাঁড়ায় প্রায় ১৫ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসেবে)।
প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার বা প্রায় ১,১৯২ কোটি টাকার প্রবাসী আয়। এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে দেশে মোট ৮৮৫ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
জুলাইয়ে এসেছে ২৪৭৭.৮৭ মিলিয়ন ডলার, আগস্টে ২৪২১.৮৯ মিলিয়ন ডলার এবং সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৬৮৫.৮৮ মিলিয়ন ডলার।
এই জাতীয় প্রবাহে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে রয়েছে কুমিল্লা জেলা। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে কুমিল্লা জেলা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং জাতীয় পর্যায়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরেই তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়কালে কুমিল্লা জেলা থেকে দেশে এসেছে ৩৭৮.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা টাকায় প্রায় ৪৬২৩ কোটি টাকা।
জুলাইয়ে এসেছে ১২৩ মিলিয়ন, আগস্টে ১১৪ মিলিয়ন এবং সেপ্টেম্বরে ১৪১.৬ মিলিয়ন ডলার। এই স্থিতিশীল রেমিট্যান্স প্রবাহ কুমিল্লাকে জাতীয় অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেমিট্যান্স হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।
শুধু কুমিল্লা নয়, পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলাও প্রবাসী আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
২০২৫–২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে এই ছয় জেলা একত্রে দেশে পাঠিয়েছে মোট ১,২৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা টাকায় প্রায় ১৫,৪৮৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসেবে)।
এর মধ্যে কুমিল্লা জেলার প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩৭৮.৬ মিলিয়ন ডলার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১৮৫.২ মিলিয়ন, চাঁদপুর ১৬৪.২ মিলিয়ন, নোয়াখালী ২২৫.৭ মিলিয়ন, ফেনী ২০০.৫ মিলিয়ন এবং লক্ষ্মীপুর থেকে এসেছে ১০৮.৮ মিলিয়ন ডলার।
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই ছয় জেলার প্রবাসীরা ধারাবাহিকভাবে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। অক্টোবর মাসের প্রথম ১১ দিনের ব্যাংকভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে এসেছে মোট ৯৮৭.৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২০১.১২ মিলিয়ন ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংক (মূলত কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ১০২.৯৭ মিলিয়ন ডলার এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৮০.৪৮ মিলিয়ন ডলার।
এককভাবে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড পাঠিয়েছে ২৪৯.৫৬ মিলিয়ন ডলার। বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩.০৪ মিলিয়ন ডলার।
মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে কর্মরত কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলার প্রবাসীরা নিয়মিত ও স্থিতিশীল হারে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, যা স্থানীয় অর্থনীতি ও জাতীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
চলতি অর্থবছরে এই প্রবাহ অব্যাহত থাকলে কুমিল্লা জেলা দেশের শীর্ষ তিন রেমিট্যান্স প্রেরণকারী জেলার অবস্থান বজায় রাখবে এবং কুমিল্লা– ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলকে রেমিট্যান্স হাবে রূপান্তর করার পথে নেতৃত্ব দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।