
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের ২৯ নম্বর সুপারিশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের ৫ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর, স্ববিরোধী ও হতাশাজনক বলে আখ্যা দিয়েছে কমিশন।
সোমবার (৭ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে দুদক সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দুর্নীতি তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা ও প্রশাসনিক জটিলতা দূর করতেই এই সুপারিশটি করা হয়েছে।
কমিশন জানিয়েছে, তাদের দেওয়া ৪৭টি সুপারিশের মধ্যে ৪৬টি সুপারিশে বিএনপির সম্মতির কথা উল্লেখ করে তারা বিএনপিকে ধন্যবাদ জানায়। তবে সুপারিশ ২৯-এর বিষয়ে বিএনপির দ্বিমত পোষণ করায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে।
সুপারিশ ২৯-এ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আদালতের অনুমতি ছাড়াই তথ্য পাওয়ার সুযোগের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে আয়কর আইন, ২০২৩-এর ৩০৯ ধারা অনুযায়ী, আদালতের আদেশ ছাড়া এনবিআর দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে পারে না।
কমিশনের মতে, এই বিধান দুদকের কার্যক্রমে অহেতুক বিলম্ব সৃষ্টি করে এবং অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত কার্যক্রমকে স্থবির করে তোলে।
কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “দুর্নীতির তদন্তে তথ্য পেতে আদালতের অনুমতি নেওয়ার বিধান বাস্তবে দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা সৃষ্টি করে এবং অনেক সময় উদ্দেশ্যমূলকভাবে তদন্ত প্রতিহত করার সুযোগ তৈরি হয়। সুপারিশ ২৯-এর মূল উদ্দেশ্য হলো এই অযৌক্তিক আইনি প্রতিবন্ধকতা দূর করে এনবিআরের তথ্য-উপাত্তে দুদকের অবাধ ও বিলম্বহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।”
তিনি আরও বলেন, “আয়কর সংক্রান্ত তথ্য গোপন রাখার যুক্তি এখানে প্রযোজ্য নয়, কারণ এসব তথ্য দুদকের তদন্তের স্বার্থে ব্যবহৃত হবে এবং এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্য নয়। বরং তথ্য গোপন রাখার এই বিধানই কার্যত দুদকের স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্তে বাধা সৃষ্টি করে।” কমিশন বলছে, এনবিআরের মতো একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা যদি আদালতের আদেশ ছাড়া দুদককে তথ্য না দেয়, তবে এটি স্বাভাবিক নয় এবং এটা দুর্নীতিবিরোধী তদন্তের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতায় বাধা।
বিবৃতিতে কমিশন আশাবাদ ব্যক্ত করে যে, বিএনপি এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। কমিশনের মতে, এনবিআর ও দুদকের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান ও সমন্বয় সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম পূর্বশর্ত এবং চলমান রাষ্ট্রসংস্কারের অংশ।