
রংপুর নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে সাতমাথা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশায় পড়ে আছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় প্রতিদিন ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। বারবার আবেদন নিবেদন করেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় চরম ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসী।
আজ রবিবার (২০ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে নগরীর সাতমাথা রেল গেট এলাকায় রংপুর সিটি কর্পোরেশনকে ‘মৃত’ ঘোষণা করে গায়েবানা জানাজা পড়ে এক অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগী স্থানীয়রা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রংপুর নগরীর এই প্রশস্ত সড়কটির বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। কোনো কোনো স্থানে গর্তে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় তা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, আবার শুকনো আবহাওয়ায় ধুলোর ঝড়ে পথচারী ও চালকদের নাভিশ্বাস উঠছে। এই ধুলোবালি শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হচ্ছে।
রিকশা, অটোরিকশা ও ভ্যানচালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের এই পথে চলাচল করতে হয়। রাস্তার বেহাল দশার কারণে যানবাহনের যন্ত্রাংশ বারবার নষ্ট হচ্ছে, যা তাদের জন্য বাড়তি খরচের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অটোরিকশা চালক জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, “এই রাস্তা বহু দিন ধরে ভাঙা। গাড়ি প্রতিনিয়ত গর্তে পড়ে ঝাঁকুনি খায়, মনে হয় উল্টে যাবে। গাড়ির অনেক ক্ষতি হয় প্রতিদিন।” ভ্যানচালক শরীফুল ইসলাম জানান, “প্রায়ই ভ্যানের বিয়ারিং, ঝালাই ভেঙে যায়। যাত্রী পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। একটা গর্ত শেষ না হতেই শুরু হয় আরেকটা।”
স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, “আমি আমার ছেলে-মেয়েকে প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে স্কুলে আনা-নেওয়া করি। প্রতিদিনই ভয় লাগে, কখন বড় কোনো বিপদে পড়ি!” স্থানীয়দের অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশনের ঠিক নাকের ডগায় এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের এমন করুণ দশা মেনে নেওয়া যায় না। তাদের মতে, “সিটি কর্পোরেশন শহরের মধ্যে থাকলেও রাস্তার অবস্থা দেখে মনে হয় আমরা কোনো ইউনিয়নের ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলছি।” এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে বহুবার জানানোর পরেও কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় মানুষজন চরমভাবে অতিষ্ঠ।
গায়েবানা জানাজায় অংশ নেওয়া রাজিমুজ্জামান হৃদয় বলেন, “নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি নিয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো মাথাব্যথা নেই। নাগরিক দুর্ভোগে মানুষজন অতিষ্ঠ। বারবার বলার পরেও সংস্কার করা হচ্ছে না। যে কারণে আমরা এই প্রতিবাদ জানিয়েছি। দ্রুত সংস্কার না হলে নাগরিক ভোগান্তি আরও চরমে পৌঁছবে।”
এ বিষয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা জানান, “পুরো সিটি এলাকায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ভাঙাচোরা হয়ে গেছে। এই সড়কগুলো সংস্কারের জন্য ২১০ কোটি ৬৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।”
উল্লেখ্য, সড়কের এই বেহাল দশা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র আক্ষেপ এবং ক্ষোভ লক্ষ্যণীয়।