রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবি করা কয়েকজন শিক্ষার্থী হল প্রশাসনের কাছে অবৈধ আবদার করায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দুই হলের ১০ জন আবাসিক শিক্ষক পদত্যাগ করেন।
গত বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) শহীদ মুক্তার ইলাহী হলের প্রভোস্ট শাহিনুর রহমান ও ওই হলের সাতজন সহকারী প্রভোস্ট একযোগে পদত্যাগ করেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দুই জন সহকারী প্রভোস্টও পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন।
জানা যায়, শহীদ মুক্তার ইলাহী হলে মোট আসন সংখ্যা ৩২০টি। এর মধ্যে শুধু ১২০টি আসনে বৈধভাবে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে। বাকি ২০০টি আসনের মধ্যে ১৪০ টি আসনে অবৈধভাবে দখল করেছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সমন্বয়কদের পরামর্শক্রমে হল প্রশাসন অবৈধ এই ১৪০ জনকে এক সপ্তাদের মধ্যে হল ছাড়ার এবং এক সপ্তাহ পর ১৪০ টি আসনসহ অবশিষ্ট ৬০ টি আসনের জন্য ভর্তির নতুন সার্কুলার দেওয়ার নোটিশ দেয় । কিন্তু পরবর্তীতে সমন্বয়কদের মধ্যে শাহরিয়ার, খোকন, আশিক, রহমত এবং সাইদুজ্জামান বাপ্পি অবৈধ ১৪০ জনকে হলে রেখে দেওয়ার জন্য প্রভোস্টকে অনুরোধ করেন। তারা আরো দাবী করেন, ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের কেউ কোনোভাবে যেন হলে ঢুকতে না পারে।সমন্বয়কদের এমন দু’মুখো প্রস্তাবের চাপে পরে পদত্যাগ করেন হলের প্রভোস্ট এবং সহকারী প্রভোস্টবৃন্দ।
অন্যদিকে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট বিজন মোহন চাকী গত ৬ আগস্ট পদত্যাগ করলে সহকারী প্রভোস্টরা শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে সব কিছু সুষ্ঠুভাবে কাজ করে আসছিল। কিন্তু প্রতিদিনই সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া শিক্ষার্থীরা একেক সময় একেক অবৈধ আবদার নিয়ে আসেন। বাপ্পিসহ বেশ কয়েকজন সমন্বয়ক পরিচয়ে শিক্ষার্থী সহকারী প্রভোস্টদের কাছে অবৈধ শিক্ষার্থীদের হলে রাখার ও দাবি জানায়।যার ফলে ওই শিক্ষকরাও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এদিকে এসব সমালোচনার মুখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বেরোবির সমন্বয়কদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
সমন্বয়ক সাইদুজ্জামান বাপ্পি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অবৈধদের হল থেকে চলে যাওয়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা যেহেতু অনেকদিন ধরে হলে ছিল, হঠাৎ করে তারা কোথায় যাবে। এটা ভেবে আমি স্যারকে বলেছিলাম, অ্যালটমেন্ট দেওয়ার সময়ে হলে অবস্থানরত অবৈধ শিক্ষার্থীদের যেন আগে এলোটমেন্ট দেয়া হয়।
পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সহকারী প্রভোস্ট ড.হারুন আল রশীদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বলতে গেলে শূন্য তাও আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে তাদের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের মধ্যেই সমন্বয়হীনতার অভাব। তাদের মধ্যে একজন বলে স্যার এইটা করুন। আবার আরেকজন এসে বলে না স্যার ওইটা করুন। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করা যায় না। যার ফলে আমি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করি।
পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে শহীদ মুক্তার ইলাহী হলের প্রভোস্ট মোঃ শাহিনুর রহমান সমন্বয়কদের অন্যায় প্রস্তাবের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, যারা আমাকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়েছিল তারা শুরুতে আমাকে বলেছিল , হলে অবৈধভাবে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা যেন এক সপ্তাহের মধ্যে চলে যায় এবং পরবর্তীতে নতুন সার্কুলারের মাধ্যমে খালি সিটগুলো পূর্ণ করতে। তাদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমি একটা নোটিশ দিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে অবৈধদের বিষয়ে সমন্বয়কদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বলেন, স্যার হঠাৎ করে ওরা আবার কোথায় যাবেন, ওরা এতদিন ধরে আছে ওখানে, হঠাৎ করে এখন কোথায় যাবে, ওরা এতদিন একটা ছাত্র সংগঠনের কাছে জিম্মি ছিল,ওরা ওদের সিটেই থাকুক। এদেরকে আপনি বৈধ করার ব্যবস্থা করেন। এসব কথা শুনে আমি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করি।