নভেম্বর ৫, ২০২৪

মঙ্গলবার ৫ নভেম্বর, ২০২৪

শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছানো শাহরুখ খানের সেরা ১০ সিনেমা

Rising Cumilla - Shah Rukh Khan
ছবি: গেটি ইমেজেস

ভরতের দিল্লির থিয়েটার অ্যাকশন গ্রুপের মধ্য দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু করা একটা সাদামাটা ছেলে আজ বিশ্বজুড়ে তোলপাড় করে সেরাদের সেরার কাতারে। বড্ড সাধারণ এক পরিবার থেকে উঠে আসা ছেলেটি ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে পড়াশোনার সময়ই ফৌজি, সার্কাসের মতো টেলিভিশন সিরিয়ালে কাজ করে নজর কাড়েন বোদ্ধাদের। তখনো হয়তো কেউ জানত না, ভারত পেতে যাচ্ছে তার সর্বকালের সেরা এক রত্ন। যে রত্নের নাম শাহরুখ খান।

আজ শনিবার (২ নভেম্বর) বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের জন্মদিন। ৫৮ পেরিয়ে ৫৯-এ পা রাখলেন এই সুপারস্টার। বিশ্বজুড়ে এই দিনটি উদযাপন করে তার কোটি কোটি অনুসারী। তিন দশকের বেশি সময়ের সিনেমা ক্যারিয়ারে বলিউড সুপারস্টার নিজেকে হাজির করেছেন বহুরুপে।

রোমান্স থেকে অ্যাকশন, ড্রামা থেকে কমেডি- সবকিছুতেই অভিনয়ের সম্রাট তিনি। ক্যারিয়ারে যে ধরনের রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তা শুধু পর্দার গল্প নয় বরং অনেকের বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি সিনেমায় তার চরিত্রগুলো প্রেমের নানান রূপ তুলে ধরে— অবিচল প্রেম, আত্মত্যাগ, বন্ধুত্বের রোমান্স, আর বেদনার প্রেম। আজ অভিনেতার জন্মদিনে তার সেরা ১০টি প্রেমের সিনেমা নিয়েই এই প্রতিবেদন।

১. দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে

পরিচালক: আদিত্য চোপড়া
মুক্তি: ১৯৯৫
আইএমডিবি রেটিং: ৮.১/১০

বলিউডে প্রেমের সিনেমাগুলোর মাইলফলক হিসেবে ধরা হয় ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ সিনেমাটিকে। রাজ এবং সিমরানের মধ্যকার প্রেম শুধু ভারতীয় দর্শকদের হৃদয়ে নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। বিশেষত প্রবাসী ভারতীয়দের জন্য এ সিনেমা ছিল ঘরের টান, সংস্কৃতির মর্যাদা ও প্রেমের এক বিশেষ উদাহরণ। রাজের চরিত্রে শাহরুখ প্রেমের জন্য নির্ভীক, রোমান্টিক নায়ক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। সিমরান চরিত্রে কাজলের অভিনয় শাহরুখের সাথে তার কেমিস্ট্রিকে অসাধারণভাবে প্রকাশ করেছে।

প্রেমের জন্য পারিবারিক বাধা অতিক্রমের গল্পটি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, যা সিনেমাটিকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা রোমান্টিক ছবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

২. কুছ কুছ হোতা হ্যায়

পরিচালক: করণ জোহর
মুক্তি: ১৯৯৮
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৬/১০

‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ বন্ধুত্ব ও প্রেমের সংমিশ্রণে তৈরি একটি গল্প, যেখানে রাহুল, অঞ্জলি এবং টিনার জীবনবোধ এবং সম্পর্কের গতি পরিবর্তনের কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শাহরুখ খান রাহুলের চরিত্রে এক বন্ধুত্বপূর্ণ প্রেমিকের আবেগকে সফলভাবে প্রকাশ করেছেন। কাজলের সাথে তার রসায়ন ছবির মূল আকর্ষণ, এবং রানি মুখার্জীর টিনা চরিত্র গল্পে একটি বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। এই সিনেমার সংলাপ, সঙ্গীত এবং চরিত্রগুলো আজও বলিউডের ক্লাসিকস হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে শাহরুখের সেই বিখ্যাত সংলাপ ‘পেয়ার দোস্তি হ্যায়’ এখনও প্রেমের সংজ্ঞা হিসেবে জনপ্রিয়।

৩. কাভি খুশি কাভি গাম

পরিচালক: করণ জোহর
মুক্তি: ২০০১
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৪/১০

‘কাভি খুশি কাভি গাম’ শুধু প্রেমের গল্পই নয়, এটি পারিবারিক সম্পর্কের এক মহাকাব্য। শাহরুখের চরিত্র রাহুল, যিনি বাবা-মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রেমে পড়েন এবং বিয়ে করেন, সেই সম্পর্কের দ্বন্দ্ব এবং অনুভূতি সিনেমার কেন্দ্রে। কাজলের সাথে তার রোমান্স অসাধারণ এবং ছবিতে প্রেমিক রাহুলের চরিত্রকে অত্যন্ত বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই ছবির ভিজ্যুয়াল ও ইমোশনাল গভীরতা, শাহরুখের সংলাপের মাধ্যমে প্রেম এবং পরিবারের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলে, তা বিশেষভাবে প্রভাবিত করে।

৪. মোহাব্বাতে

পরিচালক: আদিত্য চোপড়া
মুক্তি: ২০০০
আইএমডিবি রেটিং: ৭.০/১০

‘মোহব্বাতে’ প্রেম এবং কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে দ্বন্দ্বের গল্প। শাহরুখ খান একজন সংগীত শিক্ষক রাজ আরিয়ানের ভূমিকায়, যিনি প্রেমকে জীবনের অন্যতম মন্ত্র হিসেবে বিশ্বাস করেন। অমিতাভ বচ্চনের সাথে তার দৃঢ় ও আবেগময় দ্বন্দ্ব সিনেমার এক বড় দিক। গল্পের মূলমন্ত্র হলো প্রেম কোনো বাধা মানে না এবং এই বিশ্বাসে শাহরুখের অভিনয় দর্শকদের আবেগাপ্লুত করেছে। তার গুরুতর কিন্তু প্রেমময় ব্যক্তিত্ব এবং তিনটি যুবক দম্পতির গল্প সিনেমাটিকে আলাদা মাত্রায় নিয়ে গেছে।

৫. বীর-জারা

পরিচালক: যশ চোপড়া
মুক্তি: ২০০৪
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৮/১০

‘বীর-জারা’ হলো এক চিরন্তন প্রেমের গল্প, যেখানে ভারতীয় পাইলট বীর প্রতাপ সিং এবং পাকিস্তানি মেয়ে জারার প্রেম দুই দেশের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। শাহরুখ খানের চরিত্র বীরের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগের কাহিনী দর্শকদের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছে। ছবিটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে প্রেমের বিশালতা এবং সাহসকে তুলে ধরেছে। প্রীতি জিনতার সাথে তার রসায়ন অত্যন্ত আবেগপ্রবণ, এবং যশ চোপড়ার অসাধারণ পরিচালনা ছবিকে এক মহাকাব্যিক প্রেমের কাহিনীতে পরিণত করেছে।

৬. রাব নে বানা দি জোড়ি

পরিচালক: আদিত্য চোপড়া
মুক্তি: ২০০৮
আইএমডিবি রেটিং: ৭.২/১০

সাধারণ এক মানুষ, সুরিন্দর সাহনি, যার প্রেম এবং আন্তরিকতা প্রমাণ করে যে হৃদয়ের গভীরতা সবসময়ই বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই ছবিতে শাহরুখ দুই ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন— একদিকে শান্ত ও বিনয়ী স্বামী, অন্যদিকে এক উচ্ছ্বল ও রোমান্টিক প্রেমিক। তার অভিনয়ের সূক্ষ্মতা এবং চরিত্রের পরিণতিতে প্রেমের এক নতুন ধারণা সৃষ্টি করেছে। অনুশকা শর্মার সাথে তার কেমিস্ট্রি ছবিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

৭. চেন্নাই এক্সপ্রেস

পরিচালক: রোহিত শেঠি
মুক্তি: ২০১৩
আইএমডিবি রেটিং: ৬.১/১০

‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ হলো কমেডি এবং রোমান্সের একটি মিশ্রণ, যেখানে শাহরুখ খান একজন সাধারণ মুম্বাইয়ের যুবকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। দক্ষিণ ভারতের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা এই ছবিতে দীপিকা পাড়ুকোনের সাথে তার মজার কেমিস্ট্রি বেশ জনপ্রিয়। ছবির হাস্যরস এবং সংলাপ শাহরুখকে আরও প্রমাণিত করেছে যে তিনি শুধু সিরিয়াস নয়, রোমান্টিক কমেডিতেও সমানভাবে দক্ষ। সিনেমার লোকেশন এবং দৃশ্যাবলীও দর্শকদের মন জয় করেছে।

৮. দিল সে

পরিচালক: মনি রত্নম
মুক্তি: ১৯৯৮
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৫/১০

প্রেম, রাজনীতি এবং সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে গড়ে ওঠা এই গভীর প্রেমের গল্পটি বলিউডে একটি ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত হয়। শাহরুখ খানের চরিত্র, অমর, যে একজন রেডিও রিপোর্টার এবং মণিশা কৈরালার চরিত্র মেঘনা, যিনি বিদ্রোহী গ্রুপের একজন সদস্য, তাদের প্রেমকে সিনেমায় খুব গাঢ়ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমার সঙ্গীত, বিশেষ করে ‘ছাইয়া ছাইয়া’ গানটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ছবির শেষ দৃশ্য হৃদয়স্পর্শী এবং স্মরণীয়।

৯. ওম শান্তি ওম

পরিচালক: ফারাহ খান
মুক্তি: ২০০৭
আইএমডিবি রেটিং: ৬.৭/১০

বলিউডের চলচ্চিত্রজগৎ এবং পুনর্জন্মের গল্প নিয়ে নির্মিত এই ছবি শাহরুখ খানের জন্য বিশেষ এক মাইলফলক। দীপিকা পাড়ুকোনের সাথে তার প্রথম কাজ হওয়া সত্ত্বেও, তাদের রসায়ন অত্যন্ত প্রভাবশালী। ছবির গল্প, যেখানে প্রেমের জন্য পুনর্জন্ম হয়, তা বলিউডের ঐতিহ্যবাহী কাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত। এই সিনেমার সংলাপ এবং মিউজিক দর্শকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হয়েছে।

১০. জাব তাক হ্যায় জান

পরিচালক: যশ চোপড়া
মুক্তি: ২০১২
আইএমডিবি রেটিং: ৬.৭/১০

যশ চোপড়ার শেষ ছবিতে শাহরুখ খানের প্রেমিক চরিত্র ছিল আবেগপূর্ণ এবং জটিল। সমর আনন্দ চরিত্রে শাহরুখ একজন সেনাবাহিনীর বোমা ডিফিউসাল বিশেষজ্ঞ, যার জীবন প্রেম এবং ক্ষতির মধ্যে জড়িয়ে থাকে। ক্যাটরিনা কাইফের সাথে তার প্রেম এবং অনুশকা শর্মার চরিত্রের সাথে তার বন্ধুত্ব ছবিতে ভিন্নমাত্রার রোমান্স যোগ করেছে। শাহরুখের অভিনয়ে প্রেমের গভীরতা, আত্মত্যাগ এবং বেদনা ফুটে উঠেছে। সিনেমাটির আবেগপ্রবণ গান, মনোমুগ্ধকর লোকেশন এবং সংলাপ যশ চোপড়ার ক্লাসিক প্রেমের গল্পগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।

এই ১০টি সিনেমাই শাহরুখ খানের অভিনয় দক্ষতার বিভিন্ন দিক প্রকাশ করে, বিশেষ করে প্রেমিক চরিত্রে। রোমান্টিক চরিত্রে তার চিরস্থায়ী প্রভাব বলিউডের প্রেমের সিনেমাগুলোর ইতিহাসে অমলিন হয়ে থাকবে। শত বছর পরেও হয়তো একবাক্যে বলা হবে, তিনিই ছিলেন ওয়ান এন্ড অনলি ‘কিং অব রোমান্স’।