মার্চ ১০, ২০২৫

সোমবার ১০ মার্চ, ২০২৫

শিক্ষা ও সমাজসেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী

শিক্ষা ও সমাজসেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী
শিক্ষা ও সমাজসেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী। ছবি: প্রতিনিধি

একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সন্তান হয়ে নিজ এলাকায় উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মোচনের নেশায় যিনি প্রবাসে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছেন ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তিনি হলেন কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ধান্যদৌল গ্রামের কৃতি সন্তান মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী।

প্রবাসে থেকেও নিজের জন্মভূমির উন্নয়নে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অবদান অপরিসীম।

তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৩ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তিনি প্রায় পাঁচ একর জমি দান করেছেন, যা তাঁর দেশপ্রেম ও সমাজ সেবার প্রতীক।

তার প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ধান্যদৌল আবদুর রাজ্জাক খান চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়, মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, আবদুল মতিন খসরু মহিলা ডিগ্রি কলেজ, আশেদা জোবেদা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, মুমু রোহান চাইল্ড কেয়ার প্রি-ক্যাডেট স্কুল। প্রবাস জীবনের সংগ্রাম ও সাফল্য মোশাররফ হোসেনের জীবন সংগ্রামের গল্প অনুপ্রেরণাদায়ক। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৮৩ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি জীবিকার সন্ধানে কাতার যান।

এরপর ১৯৮৯ সালে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান এবং জীবিকার প্রয়োজনে ট্যাক্সিক্যাব চালানোসহ বিভিন্ন ধরনের ছোটখাটো কাজ করেন।

বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কে একটি ফাস্ট ফুডের দোকান চালু করেছেন। তবে তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান বাংলাদেশেই থাকেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে একা কোনোরকমে থাকি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গেলে খরচ বেড়ে যেত। তা ছাড়া গ্রামে যে কাজগুলো করছি, সেগুলো করা সম্ভব হতো না।’ তিনি তাঁর স্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যিনি তাঁর অনুপস্থিতিতে পরিবার ও সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

শিক্ষা ও সমাজসেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাই নয়, নিজ খরচে দুটি গ্রন্থাগারও প্রতিষ্ঠা করেছেন।

এছাড়া ঈদগাহ, কবরস্থান, মসজিদের উন্নয়নেও তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। ডায়াবেটিস হাসপাতাল তৈরির জন্য তিনি জমি কিনে দিয়েছেন। গরিব শিক্ষার্থীদের আর্থিক অনটনের কারণে যাতে লেখাপড়া থেকে পিছিয়ে না পড়ে, সে জন্য তিনি একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন, যা থেকে নিয়মিত শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়।

ব্রাহ্মণপাড়ার শ্রীশ্রী কালীমন্দির জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল এবং উপাসনা ব্যাহত হচ্ছিল। মন্দির চত্বরে থাকা শতবর্ষী বটগাছটি ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে মন্দির সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সংবাদ মাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হলে মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী দ্রুত মন্দির কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং এক লাখ টাকায় গাছটি কিনে আবার মন্দিরকেই দান করেন। মন্দির রক্ষা কমিটির

সভাপতি তপন কান্তি দেব বলেন, ‘এই গাছটি এখন তার আয়ুষ্কাল অবধি বেঁচে থাকবে। এলাকার হিন্দু-মুসলিম সবাই মোশাররফ হোসেনের এই মহৎ উদ্যোগের কথা মনে রাখবেন।’ সম্মান ও স্বীকৃতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে মোশাররফ হোসেনের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ নিয়ে গেলে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

কারণ, সবাই জানেন, তিনি প্রবাসে কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জিত অর্থ নিঃস্বার্থভাবে দেশের শিক্ষা ও সমাজকল্যাণে ব্যয় করছেন।

ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষ তাঁর অবদান স্বীকার করেন এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকেন।

রাজনীতিতে বিষয়ে জানতে চাইলে, পঞ্চাশোর্ধ্ব মোশারফ হোসেন বলেন, ‘রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ছিল, আছে এবং থাকবে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমার জেলা ও জন্মভূমি ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তবে কেউ যদি আমাকে অপছন্দ করে, কেন করে তা আমি জানি না।

প্রবাসে থেকেও নিজের জন্মভূমির উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী। শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা এবং সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অবদান সত্যিই অনুকরণীয়।

তাঁর মহৎ উদ্যোগ ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। উল্লেখ্য মোশারফ খান চৌধুরীর আপন ভাই সোহরাব খান চৌধুরী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ঢাকায় নিজ বাসভবনটি উন্মুক্ত করে দেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নের্তৃবৃন্দকে থাকার জন্য।