
আপনি হয়তো রোজ নিয়ম করে স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন, শরীরচর্চা করছেন। তবুও কি ক্লান্তি আর অস্বস্তি আপনার পিছু ছাড়ছে না? সারাক্ষণ ঝিমুনি, চুল পড়া, ত্বকের রুক্ষতা কিংবা মাংসপেশিতে ব্যথা—এগুলো কিন্তু আপনার শরীরের নীরব বার্তা। এই লক্ষণগুলো জানান দিচ্ছে আপনার শরীরে জরুরি কিছু পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ ভিটামিনের অভাবে ভুগছেন। অথচ অনেকেই এই আপাত সাধারণ সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেন না। ভিটামিনের অভাব মূলত দুই ধরনের হতে পারে—খাদ্যে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব (প্রাইমারি ডেফিসিয়েন্সি), যেমন ভিটামিন সির অভাবে স্কার্ভি। আবার শরীর যদি খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ করতে ব্যর্থ হয় (সেকেন্ডারি ডেফিসিয়েন্সি), যেমন সেলিয়াক ডিজিজেও ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিলে বেশ কিছু লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আসুন, সেই ৮টি লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
১. অবিরাম ক্লান্তি: পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও যদি সারাদিন ক্লান্তি বা ঝিমুনি অনুভব করেন, তবে এটি ভিটামিন ডি, বি-১২, আয়রন বা ফোলেটের অভাবের সংকেত হতে পারে। এর সমাধানে ডিম, মাছ, সবুজ শাকসবজি এবং সূর্যের আলো গায়ে মাখান।
২. মাংসপেশিতে দুর্বলতা বা ব্যথা: হঠাৎ করে হাঁটু বা পায়ে ব্যথা অনুভব করলে ভিটামিন ডি, ই, ম্যাগনেসিয়াম বা ভিটামিন বি-এর অভাব থাকতে পারে। বাদাম, ডার্ক চকলেট, দুধ এবং ভিটামিনযুক্ত খাবার এক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে।
৩. চুল পড়া বা পাতলা হয়ে যাওয়া: যদি দেখেন প্রতিদিন ১০০টির বেশি চুল পড়ছে, তবে সতর্ক হোন। এটি বায়োটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি-২ বা ফোলেটের অভাবের কারণে হতে পারে। ডিমের কুসুম ও মসুর ডাল খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।
৪. শুষ্ক ত্বক ও ড্যানড্রাফ: ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেও যদি ত্বক শুষ্ক থাকে এবং খুশকির সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে ভিটামিন এ, ই, সি, ওমেগা-৩ বা কোলাজেনের ঘাটতি থাকতে পারে। গাজর, মিষ্টি কুমড়া এবং ফ্যাটি ফিশ এক্ষেত্রে সহায়ক।
৫. ক্ষত শুকাতে দেরি বা ঘন ঘন অসুস্থতা: ছোটখাটো কাটাছেঁড়া সারতে যদি বেশি সময় লাগে বা আপনি যদি ঘন ঘন অসুস্থ হন, তবে এটি দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার লক্ষণ। ভিটামিন সি, ই, কে বা জিঙ্কের অভাব এর কারণ হতে পারে। লেবু, বাদাম, পালংশাক ও সামুদ্রিক মাছ খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।
৬. মুড সুইং বা অবসাদ: অকারণে খারাপ লাগা বা উদ্বেগের অনুভূতি ভিটামিন ডি অথবা ভিটামিন বি-৬ এর অভাবের কারণে হতে পারে। সামুদ্রিক মাছ, সূর্যমুখী বীজ, কলা এবং পর্যাপ্ত সূর্যের আলো এক্ষেত্রে কাজে দেবে।
৭. দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া: রাতে কম দেখা বা চোখে ঝাপসা লাগা ভিটামিন এ বা ই-এর ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। গাজর, মিষ্টি আলু ও কাঠবাদাম এক্ষেত্রে উপকারী।
৮. হাত-পায়ে ঝিঁঝি বা অবশ ভাব: হঠাৎ করে হাত-পায়ে সূঁচ ফোটার মতো অনুভূতি স্নায়ুর ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়। ভিটামিন বি-১২, ম্যাগনেসিয়াম বা ক্যালসিয়ামের অভাবে এমন হতে পারে। ডিম, দুধ, সবুজ শাকসবজি ও বীজজাতীয় খাবার এক্ষেত্রে সহায়ক।
করণীয়:
এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত আপনার খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিন। প্রক্রিয়াজাত খাবার ত্যাগ করে তাজা ফল, শাকসবজি, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন গ্রহণ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, ভিটামিন এ বা ডি-এর অতিরিক্ত মাত্রা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই নিজে থেকে কোনো ওষুধ গ্রহণ করবেন না।