
তথ্য চুরি থেকে সিস্টেমের ক্ষতি এক ম্যালওয়্যারেই ঘটতে পারে বড় সর্বনাশ! আপনার ল্যাপটপ সুস্থ আছে তো? জেনে নিন ম্যালওয়্যার আক্রমণের ৭টি সাধারণ লক্ষণ এবং বাঁচার উপায়।
বর্তমান সময়ে ল্যাপটপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। অফিস, পড়াশোনা, যোগাযোগ, এমনকি বিনোদনের ক্ষেত্রেও এটি মূল সঙ্গী। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইসটি যদি ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার (Malware)-এর কবলে পড়ে, তাহলে বড় বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। ম্যালওয়্যার হলো এমন এক ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার, যা গোপনে আপনার ল্যাপটপে প্রবেশ করে তথ্য চুরি করতে পারে, নজরদারি চালাতে পারে, এমনকি পুরো সিস্টেমটিকে অকেজো করে দিতে পারে।
ল্যাপটপে ম্যালওয়্যার থাকার ৭টি জরুরি লক্ষণ
১. ল্যাপটপ হঠাৎ খুব স্লো হয়ে গেছে: আপনার ল্যাপটপ যদি অপ্রত্যাশিতভাবে ধীরে কাজ করে বা চালু হতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় নেয়, তাহলে তা ম্যালওয়্যার আক্রমণের একটি প্রধান লক্ষণ হতে পারে। অনেক ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার ব্যাকগ্রাউন্ডে গোপনে চলতে থাকে, যা প্রসেসরে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং ডিভাইসের গতি কমিয়ে দেয়।
২. বারবার অচেনা পপ-আপ বিজ্ঞাপন আসে: ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের সময় হুটহাট করে যদি অচেনা, অপ্রত্যাশিত বিজ্ঞাপন বা লোভনীয় অফারের পপ-আপ স্ক্রিনে বারবার আসতে থাকে, তবে তা অ্যাডওয়্যার নামের এক ধরনের ম্যালওয়্যারের উপস্থিতি নির্দেশ করে।
৩. ব্রাউজারের হোমপেজ বা সার্চ ইঞ্জিন নিজে থেকে বদলে গেছে: আপনি নিজে কোনো পরিবর্তন না করলেও যদি দেখেন ব্রাউজারের হোমপেজ বা ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন বদলে অন্য কিছু হয়ে গেছে, তবে সতর্ক হোন। অনেক ম্যালওয়্যার ব্রাউজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যবহারকারীকে ভুয়া বা ক্ষতিকর ওয়েবসাইটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
৪. ল্যাপটপ অস্বাভাবিকভাবে গরম হয়ে যাচ্ছে: যদি ল্যাপটপ ব্যবহার না করার সময়ও ফ্যান দ্রুত ঘুরতে থাকে বা ডিভাইসটি খুব গরম হয়ে যায়, তবে বুঝবেন—পেছনে কিছু চলছে। ম্যালওয়্যার গোপনে অতিরিক্ত কাজ করার ফলে প্রসেসরে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে ল্যাপটপ অস্বাভাবিকভাবে উত্তপ্ত হয়।
৫. এমন সফটওয়্যার দেখছেন, যা আপনি ইনস্টল করেননি: ল্যাপটপে যদি হঠাৎ এমন কোনো সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম দেখতে পান, যা আপনি ইনস্টল করেননি বা যার নামও আপনি শোনেননি—তবে সেটি ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে সিস্টেমে এসেছে। এই ধরনের সফটওয়্যার গোপনে আপনার ডেটা চুরি বা ক্ষতি করতে পারে।
৬. দরকারি ফাইল হঠাৎ গায়েব বা লক হয়ে গেছে: যদি আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল খুলতে গেলে ‘লকড’ বা ‘এনক্রিপ্টেড’ বার্তা আসে অথবা হঠাৎ ফাইলগুলি উধাও হয়ে যায়, তবে এটি র্যানসমওয়্যার-এর আক্রমণ হতে পারে। এই ম্যালওয়্যার ফাইল লক করে দেয় এবং সেগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে টাকা বা মুক্তিপণ (Ransom) দাবি করে।
৭. অ্যান্টিভাইরাস হঠাৎ কাজ করছে না বা বন্ধ হয়ে গেছে: যদি দেখেন আপনার নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে, বা স্ক্যান আর কাজ করছে না—তবে এর অর্থ হতে পারে ম্যালওয়্যারটি নিজেই অ্যান্টিভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে। ম্যালওয়্যারের হাত থেকে বাঁচতে এটি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত।
এই লক্ষণ দেখলে কী করবেন? সুরক্ষার উপায় সম্পূর্ণ স্ক্যান:
প্রথমেই আপডেটেড অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে পুরো ল্যাপটপটি ভালোভাবে স্ক্যান করুন।
অজানা সফটওয়্যার আনইনস্টল: সন্দেহজনক বা আপনার অজানা সব সফটওয়্যার দ্রুত সিস্টেম থেকে আনইনস্টল করে দিন।
পেশাদার সহায়তা: যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তবে একজন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান বা প্রফেশনাল সহায়কের শরণাপন্ন হোন।
নিয়মিত সতর্ক থাকুন: ব্রাউজিংয়ের সময় সবসময় সতর্ক থাকুন, বিশেষ করে কোনো লিংকে ক্লিক করা বা কিছু ডাউনলোডের আগে।
ডাউনলোডে সতর্কতা: কেবলমাত্র পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট বা উৎস থেকে ফাইল বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করুন।
সফটওয়্যার আপডেট: সময়মতো আপনার অপারেটিং সিস্টেম এবং অন্যান্য সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করুন, কারণ আপডেটগুলি সুরক্ষার ত্রুটিগুলি ঠিক করে দেয়।
প্রযুক্তির সুবিধা উপভোগ করতে হলে তার নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা জরুরি। নিয়মিত চেক করুন—আপনার ল্যাপটপ কি সুস্থ আছে? আগে থেকে সতর্ক থাকলে বড় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।