নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ ও উপসর্গ সাধারণত সংক্রমণের ৪ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে প্রকাশিত হয়। লক্ষণগুলি সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, বমি, গলা ব্যথা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো হয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে রোগীরা আরও গুরুতর লক্ষণগুলির সম্মুখীন হতে পারেন,
যেমন:
- মাথা ঘোরা
- তৃষ্ণা
- অচেতনতা
- অসংলগ্ন প্রলাপ
- মস্তিষ্কের তীব্র সংক্রমণজনিত স্নায়বিক লক্ষণ
- শ্বাসকষ্ট
এই গুরুতর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনকেফালাইটিস)
- মেরুদণ্ডের মজ্জার প্রদাহ (মিনিংসাইটিস)
- শ্বাসকষ্টের কারণে মৃত্যু
নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ
নিপাহ ভাইরাস একটি Zoonotic ভাইরাস, যার অর্থ এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। বাদুর নিপাহ ভাইরাসের প্রাকৃতিক বাহক। বাদুর যখন ফল খায় বা ফলের রস খায়, তখন তাদের মলমূত্র ও লালায় ভাইরাসটি উপস্থিত থাকে। এই দূষিত ফল বা ফলের রস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রধানত কাঁচা খেজুরের রস থেকে ছড়ায়। বাদুর খেজুরের রস খায় এবং তারপর সেই দূষিত রস দিয়ে কাঁচা খেজুর বা খেজুরের গুড় তৈরি করা হয়। এই দূষিত খেজুর বা খেজুরের গুড় খাওয়ার মাধ্যমে মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
অন্যান্য উপায়ে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে পারে, যেমন:
- আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের লালা, থুথু বা রক্তের সংস্পর্শে আসা
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জামাকাপড়, তোয়ালে বা অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের সংস্পর্শে আসা
নিপাহ ভাইরাসের চিকিৎসা
নিপাহ ভাইরাসের এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে, লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব। এই চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:
- জ্বর ও ব্যথানাশক ওষুধ প্রদান।
- শ্বাসকষ্টের জন্য ওষুধ।
- মস্তিষ্কের প্রদাহের জন্য ওষুধ।
- স্যালাইন ও অন্যান্য তরল পদার্থের মাধ্যমে পানিশূন্যতা দূর করা।
- যদি রোগীর জ্ঞান হারিয়ে যায়, তাহলে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র ব্যবহার করা।
নিপাহ ভাইরাসের প্রতিরোধ
- কাঁচা খেজুরের রস পান করা থেকে বিরত থাকুন।
- বাদুর দ্বারা দূষিত ফল বা ফলের পণ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জামাকাপড়, তোয়ালে বা অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।