
সুস্বাদু খাবারের আয়োজনে গরু বা খাসির মাংসই নয়, অনেকের প্রিয় খাবারের তালিকায় থাকে গরু-খাসির ভুড়িও। খেতে দারুণ মজাদার হলেও এটি পরিষ্কার করা বেশ ঝক্কির কাজ। সময়সাপেক্ষ হওয়ার পাশাপাশি এটি অনেকের কাছেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করলে সহজেই এই কাজটি সেরে ফেলা যায় এবং তৈরি করা যায় মজাদার ভুড়ির নানা পদ। আর এভাবে পরিষ্কার করলে গন্ধও দূর হবে ভুঁড়ির।
ভুড়ি পরিষ্কারের ধাপসমূহ:
ভুড়ি পরিষ্কারের জন্য লেবুর রস একটি দারুণ কার্যকর উপাদান। দুটি পাকা লেবু থেকে রস বের করে নিন। একটি বড় গামলায় ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। ভুড়িকে বড় কয়েকটি টুকরায় কেটে এই লেবু মিশ্রিত পানিতে এক থেকে দুই মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর উঠিয়ে নিয়ে একটি স্টিলের চামচের সাহায্যে আঁচড়ে কালো অংশটি তুলে ফেলুন। দেখবেন, কালো ময়লা সহজেই উঠে আসছে।
সেদ্ধ করে ঘষে পরিষ্কার:
প্রথমে কাঁচি দিয়ে ভুড়িকে কয়েকটি বড় টুকরায় ভাগ করে নিন। এরপর পানিতে গরম করে ভুড়ি সেদ্ধ করে নিন। চুলা থেকে নামিয়ে গরম থাকা অবস্থায়ই হাতে গ্লাভস পরে চামচ দিয়ে ঘষে ময়লাগুলো উঠিয়ে ফেলুন। প্রাথমিকভাবে পরিষ্কার করা হয়ে গেলে একটি বড় প্যানে পরিমাণ মতো পানি গরম করুন, যেন ভুড়ির টুকরাগুলো পানিতে ডুবে থাকে। এই পানিতে ১ চা চামচ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে কেটে রাখা ভুড়ির টুকরাগুলো দিয়ে দিন। বলক ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর তেল ও ময়লা পানির উপরে ভেসে উঠবে। এবার একটি ঝাঁঝরিতে ভুড়িগুলো উঠিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। গরম অবস্থায় চামচ দিয়ে চেঁছে বাকি ময়লা তুলে ফেলুন, বিশেষ করে চর্বির অংশে জমে থাকা ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার করা জরুরি। পেছনের অংশের পাতলা আবরণ চাইলে উঠিয়ে ফেলতে পারেন, এতে আরও দ্রুত পরিষ্কার হবে।
লবণ পানির ব্যবহার:
লবণ মিশ্রিত পানিতে বড় টুকরা করে কাটা ভুড়ি ডুবিয়ে চুলায় বসিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে কাটিং বোর্ডের উপর রেখে ছুরির সাহায্যে কালো অংশ পরিষ্কার করে ফেলুন। এই পদ্ধতিতেও ভুড়ি সহজেই পরিষ্কার করা যায়।
চুনের সাহায্যে পরিষ্কার:
চাইলে চুনের সাহায্যেও ঝটপট বট বা ভুড়ি পরিষ্কার করতে পারেন। এজন্য একটি গামলায় পানি ও কয়েক টেবিল চামচ চুন নিয়ে পানিতে ভালো করে গুলে নিন। আধা ঘণ্টা ভুড়ির টুকরাগুলো এই চুন মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। এরপর চামচ দিয়ে কালো অংশ চেঁছে উঠিয়ে ফেলুন। পরিষ্কার করা হলে কাঁচি অথবা বটি দিয়ে ফিতার মতো কেটে মাঝখান থেকে ছোট ছোট টুকরা করুন। কাটার পর আবারও সেদ্ধ করে নিন। এতে ভুড়ির দুর্গন্ধ দূর হবে। সেদ্ধ করার পানিতে ২ টুকরা দারুচিনি, তেজপাতা, কয়েকটি এলাচ ও লবঙ্গ দিয়ে দিন। ৫ মিনিট ফুটে ওঠার পর ভুড়ির টুকরাগুলো দিয়ে দিন এবং বলক ওঠার পর আরও ১০ মিনিট সেদ্ধ করুন। এরপর নামিয়ে পানি ঝরিয়ে কয়েকবার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ঠান্ডা হলে ছোট জিপলক ব্যাগ কিংবা মুখবন্ধ বাটিতে করে ফ্রিজে রেখে দিন।
ভিনেগার ও লবণের মিশ্রণ:
ভিনেগার ও লবণ মিশ্রিত পানিতে ভুড়ি ভিজিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর উঠিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। ভুড়ির উপরে ও নিচে দুটি চামড়ার পরত থাকে। এক কোণা থেকে উপরের পরতের অংশ ধরে টেনে ধীরে ধীরে কালো অংশটি আলাদা করে ফেলুন। পর্যাপ্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করা ভুড়ি ধুয়ে নিন। উল্টো দিকে থাকা কালো অংশ হাতের সাহায্যে উঠিয়ে ফেলুন।
দুর্গন্ধ দূর করবেন যভাবে:
- ভুড়ির দুর্গন্ধ দূর করতে পরিষ্কার করার পর টুকরো করে কেটে সেদ্ধ করে নিন।
- সেদ্ধ করার পানিতে ২ টুকরা দারুচিনি, তেজপাতা, কয়েকটি এলাচ ও লবঙ্গ দিন। ৫ মিনিট ফুটে ওঠার পর ভুড়ির টুকরাগুলো দিন। বলক ওঠার পর আরও ১০ মিনিট সেদ্ধ করুন।
- চুলায় পানি বসিয়ে তাতে পরিমাণ মতো লবণ ও আধা চা চামচ হলুদের গুঁড়া দিন। এতে ভুড়িতে থাকা আঁশটে গন্ধ চলে যাবে। ফুটে উঠলে ভুড়ি দিয়ে ২০ মিনিট সেদ্ধ করে নামিয়ে স্ট্রেইনারে ঢেলে দিন। ঠান্ডা হলে পছন্দ মতো আকারের টুকরো করে কেটে নিন। সংরক্ষণ করতে চাইলে জিপলক ব্যাগে ঢুকিয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন।
- আদা বাটা ও হলুদ গুঁড়া পানিতে মিশিয়েও ফুটিয়ে নিতে পারেন ভুড়ি। এটিও দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করবে।
কিছু বাড়তি টিপস:
- ভুড়ি পরিষ্কারের সময় অবশ্যই স্যানিটারি গ্লাভস ব্যবহার করুন। এতে হাতে দুর্গন্ধ বসবে না।
- ভুড়ি ও নড়ি একসঙ্গে পরিষ্কার করতে চাইলে একই ধাপে আলাদাভাবে পরিষ্কার করুন।
- ভুড়ি রান্নার সময় পর্যাপ্ত পেঁয়াজ, রসুন এবং গরম মসলা ব্যবহার করুন। এতে ভুড়ির নিজস্ব গন্ধ দূর হবে এবং স্বাদ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
- পরিষ্কার করা ভুড়ি যদি কয়েকদিন সংরক্ষণ করতে চান, তবে ভালোভাবে সেদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দিন। এতে ভুড়ি দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।