অন্তর্বীতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বৈমষ্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই। এ সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তারা বেশ কিছু চাওয়া-পাওয়ার কথা তুলে ধরেছেন। তেমনি আশ্বাস মিলেছে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেও।
বুধবার (৬ নভেম্বর) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এ সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তারা।
পরে শহীদ আবু সাঈদের ভাইয়েরা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার জন্য বাবা-মায়ের কাছ থেকে ‘সালাম’ এবং শুভ কামনার বার্তা নিয়ে এসেছিলাম।”
গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূস তার ঐতিহাসিক ভাষণে আবু সাঈদ ও অন্য শহীদদের আত্মত্যাগের কথা যখন বলছিলেন তখন আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন বলে জানান তার ভাইয়েরা।
ড. ইউনূসকে আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ‘বিপ্লবে তার বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা আপনি তুলে ধরেছেন এবং প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার একদিন পরই রংপুরে আমাদের গ্রামে আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন এতে আমরা সম্মানিত বোধ করেছি।’
প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড স্যালুট দেয়ার সময় আবু সাঈদের দুই ভাইও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
শহিদ আবু সাঈদের অপর ভাই আবু হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সাথে যখন আমরা মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলাম এবং সৈন্যরা আমাদেরকে স্যালুট দিয়ে সম্মান জানায় তখন আমাদের কেমন লেগেছিল তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তারা আবু সাঈদ হত্যা মামলার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করে বলেন, তারা হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান ।
দুই ভাই তাদের শহিদ ভাইয়ের নামে একটি ফাউন্ডেশন গঠন করবেন উল্লেখ করে বলেন, তারা তাদের শহিদ ভাইয়ের স্মরণে তাদের গ্রামে একটি ‘মডেল মসজিদ’ এবং একটি মেডিকেল কলেজ প্রত্ষ্ঠিা করতে চান এবং তারা এ বিষয়ে সহায়তার জন্য দুটি মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছেন।
আবু হোসেন বলেন, ‘এ ফাউন্ডেশন দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কাজ করবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আবু সাঈদের পরিবারের জন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশকে তার হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করার এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘শহিদ আবু সাঈদ জাতির জন্য যা করেছেন তা বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না। তার আত্মত্যাগ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।’
তিনি তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তাদের জন্য তাঁর দরজা সবসময় খোলা থাকবে।
তিনি দুই ভাইকে তাদের বাবা-মাকে তাঁর ‘সালাম’ পৌঁছে দিতে বলেন এবং সবসময় তাদের সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক একদিন পর ৯ আগস্ট রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে আবু সাঈদের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন ও ফাতেহা পাঠ করেন।
খবর: বাসস