
দুধ শৈশব থেকেই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে—দুধ কি সত্যিই ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে? এর উত্তর বোঝার জন্য দুধে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও কার্যপ্রণালীকে বোঝা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিকভাবে দুধ খেলে এটি পেশিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। কারণ এর পুষ্টিগুণ শুধু শরীরকে শক্তিশালী করে না, বরং হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রেখে বিপাকক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে।
দুধে মূলত দুটি প্রধান প্রোটিন থাকে—হুই প্রোটিন এবং কেসিন প্রোটিন।
হুই প্রোটিন:
দ্রুত হজম হয় এবং মাত্র ৩০–৬০ মিনিটের মধ্যে শরীরে শোষিত হয়। ব্যায়ামের পরে শক্তি ফেরাতে, ক্ষয় হওয়া স্নায়ু পুনর্গঠনে এবং পেশির বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শরীরে অ্যামিনো এসিডের ঘাটতি পূরণ করে এবং পেশি ক্ষয় রোধ করে। পেশি যত মজবুত হবে, শরীরের ক্যালরি বার্ন তত দ্রুত হবে, ফলে ওজন কমার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।
কেসিন প্রোটিন:
ধীরে ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে অ্যামিনো এসিড সরবরাহ করে। রাতে দুধ খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভব হয়, ফলে অতিরিক্ত ক্ষুধা বা হালকা খাবারের অভ্যাস কমে যায়। পেশি পুনর্গঠন, স্নায়ু মজবুত রাখা এবং শরীরকে দীর্ঘ সময় শক্তিশালী রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কেসিন প্রোটিনের এই ‘স্লো রিলিজ’ বৈশিষ্ট্য ওজন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত সহায়ক।
দুধে উচ্চমাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকে, যা শরীরে চর্বি সঞ্চয়কারী হরমোন কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যালসিয়াম শরীরকে বেশি চর্বি বার্ন করতে উদ্দীপিত করতে পারে। ফলে নিয়মিত দুধ খেলে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে এবং চর্বির স্তর ধীরে ধীরে কমে।
এছাড়াও, দুধের ক্যালসিয়াম হাড়, দাঁত এবং কোষের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা সামগ্রিক শারীরিক কার্যকারিতাকে উন্নত করে।
দুধে থাকা পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২ এবং ভিটামিন ডি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকলে ওজন কমানো সহজ হয়। বিশেষ করে ভিটামিন ডি চর্বি কোষ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দুধে থাকা প্রো-বায়োটিকস পাচনতন্ত্র ভালো রাখে, খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে এবং পেট ফাঁপা কমায়। পেট ফাঁপা কমলে ওজন স্বাভাবিকভাবেই কমতে দেখা যায়।
দুধে থাকা প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও মিনারেল শরীরকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ওজন কমাতেও সহায়ক। সঠিক সময়ে ও নিয়মিত দুধ খেলে পেশি বৃদ্ধি, মেটাবলিজম বাড়ানো এবং অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস










