সোমবার ১৮ আগস্ট, ২০২৫

পারিবারিক সহিংসতা: গত ৭ মাসে ৩২২ নারীর মৃত্যু

রাইজিং ডেস্ক

Rising Cumilla - family feud
প্রতীকি ছবি এআই/রাইজিং কুমিল্লা

পারিবারিক সহিংসতা যেন এক মরণব্যাধি, যা দিনে দিনে গ্রাস করছে আমাদের সমাজকে। তুচ্ছ পারিবারিক কলহের জেরে নারীদের ওপর নৃশংসতার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, আর এর করুণ পরিণতি হিসেবে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৩৬৩ জন নারী, যার মধ্যে ৩২২ জনেরই প্রাণহানি ঘটেছে। এই ভয়াবহ চিত্র সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক গভীর ক্ষতকে উন্মোচন করে।

আসকের তথ্য অনুযায়ী, নিহত ৩২২ জন নারীর মধ্যে ১৩৩ জনকেই খুন করেছেন তাদের স্বামীরা। এছাড়াও স্বামীর পরিবারের সদস্যদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪২ জন নারী। পারিবারিক কলহের জেরে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, নিজ পরিবারের সদস্যদের হাতে খুন হয়েছেন আরও ৩৩ জন নারী। এছাড়া সহিংসতার কারণে সৃষ্ট মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ১১৪ জন নারী। এই পরিসংখ্যান কেবল কয়েকটি সংখ্যার সমষ্টি নয়, প্রতিটি সংখ্যার পেছনে লুকিয়ে আছে এক একটি করুণ জীবনের সমাপ্তি।

কেন বাড়ছে এই সহিংসতা?

বিশ্লেষকরা এই সহিংসতার নেপথ্যে বেশ কিছু কারণকে দায়ী করছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো পারিবারিক শিক্ষার অভাব, পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা, এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির নেতিবাচক প্রভাব। এছাড়া, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধীদের আরও বেশি বেপরোয়া করে তুলছে।

অনেক সময় দেখা যায়, সন্তানদের সামনেই স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বামী পালিয়ে যাচ্ছে, যা সমাজের নৈতিক অবক্ষয়কে স্পষ্ট করে তোলে।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা:

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুসারে, গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় চার সন্তানের জননী ফাহমিদা তাহসিন কেয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ ওঠে তার স্বামী সিফাত আলীর বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।

এর মাত্র এক সপ্তাহ আগে, ৩ আগস্ট টাঙ্গাইলের সখীপুরে সন্তানদের সামনেই স্ত্রী কাকুলি আক্তারকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে মেহেদী হাসান। এই ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করলেও, এমন নৃশংসতা সমাজে এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে।

এর ঠিক ১ দিন আগে গাজীপুরে এক পোশাককর্মীকে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে তার স্বামীর বিরুদ্ধে।

নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, কেবল আইন দিয়ে এই সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সমাজ ও পরিবারের সম্মিলিত সচেতনতা। পরিবারে নারীর প্রতি সম্মান ও সহনশীলতার শিক্ষা দিতে হবে।

আরও পড়ুন