মঙ্গলবার ২ ডিসেম্বর, ২০২৫

পণ্য রফতানিতে রেকর্ড গড়েছে কুমিল্লা ইপিজেড

রাইজিং ডেস্ক

কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়া এলাকা (ইপিজেড)

২০০০ সালে ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) তার মূল লক্ষ্য শিল্পায়ন, বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রপ্তানি বৃদ্ধিতে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে। বর্তমানে এই শিল্পনগরী কর্মচঞ্চল এক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা ইপিজেডে বর্তমানে মোট ২৪৩টি প্লট রয়েছে, যেখানে ৪৬টি দেশি-বিদেশি কোম্পানি পুরোদমে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া ৬টি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এই শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে।

বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩১টি সম্পূর্ণ বিদেশি, আটটি দেশি-বিদেশি যৌথ-উদ্যোগ এবং ১৩টি সম্পূর্ণ বাংলাদেশি মালিকানাধীন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপাদিত পণ্য ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার ১৭টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, তাইওয়ান, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও পাকিস্তান অন্যতম।

রেকর্ড রপ্তানি:

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) সূত্রে আরও জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে কুমিল্লা ইপিজেডে রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়ায় ৯০১.২২ মিলিয়ন ডলারে। এছাড়া ২০২০–২১ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৬৫.৮৫ মিলিয়ন ডলার, ২০২১–২২ সালে ৮১৪.৮২ মিলিয়ন ডলার, ২০২২–২৩ সালে ৭৯০.৯৪ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩–২৪ সালে ৭১১.৩৭ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লা ইপিজেড এখন এক বিশাল কর্মচঞ্চল শিল্পনগরী। এখানে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করছেন, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা রাখছে। এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের মধ্যে ৬৬ শতাংশই নারী। কলকারখানার অভ্যন্তরে মেশিনের শব্দ, শ্রমিকদের ব্যস্ততা আর উৎপাদনের ধারাবাহিকতায় পুরো এলাকা মুখর থাকে।

শ্রমিক কল্যাণেও সচেষ্ট ইপিজেড কর্তৃপক্ষ এবং কোম্পানিগুলো। ইপিজেডের নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহবুব জানান, শ্রমিকদের কল্যাণে মেডিকেল সেন্টার ও বেপজা স্কুল-কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। এখানে শ্রমিকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, আর তাদের সন্তানরা অর্ধেক টিউশন ফিতে পড়াশোনা করার সুযোগ পায়। তিনি বলেন, “২০২৪–২৫ অর্থবছরে কুমিল্লা ইপিজেডে ৯০১.২২ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি একটি রেকর্ড। শ্রমিক কল্যাণে আমাদের এসব উদ্যোগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।”

স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব:

শ্রমিকদের প্রতি মাসে বেতন ও ভাতা বাবদ ব্যয় হয় প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। এতে স্থানীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক সক্রিয়তা এসেছে। প্রায় সব শ্রমিক আশপাশের এলাকায় বসবাস করছেন এবং স্থানীয় বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে জীবিকা নির্বাহ করছেন, যা কুমিল্লার অর্থনীতিতে নতুন গতি এনেছে। আশপাশের দোকান, বাসা ভাড়া ও পরিবহন খাতেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি এসেছে।

শ্রমিকরা এখানে কাজ করে সন্তুষ্ট। যেমন রোজিনা বেগম, যিনি বৈবাহিক সূত্রে অন্য জেলা থেকে কুমিল্লায় এসে ৮ বছর ধরে এখানে চাকরি করছেন, তিনি জানান, “এখানে চাকরি করছি। ভালো আছি।”

এছাড়া দেশি শ্রমিকদের পাশাপাশি, এখানে ২৮৫ জন বিদেশিও কাজ করছেন, যাদের বেশিরভাগই চীন ও তাইওয়ান থেকে আসা।

মার্কিন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান পিওয়াই আন্ডারগার্মেন্টসের ব্যবস্থাপক আব্দুর রহিম শ্রমিক কল্যাণে তাদের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমরা শ্রমিকদের কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ওয়ার্কফ্রেন্ডলি পরিবেশ তৈরিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।”

কুমিল্লা ইপিজেড কেবল রপ্তানি আয় বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে না, বরং ৫০ হাজারেরও বেশি স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং শ্রমিক কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে একটি টেকসই শিল্পাঞ্চলের উদাহরণ তৈরি করছে।

আরও পড়ুন