
নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সংগঠনটি মনে করে, এই সমস্যা এখন জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে।
গতকাল সোমবার (১০ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পরিষদের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তারা এ কথা বলেন।
“নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়” শীর্ষক এই সভায় নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির সদস্যরা অংশ নেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “নারী ও কন্যা নির্যাতনের মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। বর্তমানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। নারীর প্রতি সহিংসতা কেবল নারীর সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। এই সমস্যা দূর করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”
মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতার এই ভয়াবহ রূপ হঠাৎ করেই প্রকট হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের কার্যকর উদ্যোগ এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এ বিষয়ে রাষ্ট্রকে দায়বদ্ধ করতে হবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টি সবসময়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এটি প্রায়শই উপেক্ষিত হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে নারীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারেন।”
লেখক ও গবেষক মফিদুল হক বলেন, “নারীর প্রতি নৃশংসতা বাড়ছে এবং ধর্মের নামে অপব্যবহার হচ্ছে। এসব বিষয়ে আইনের প্রতিবন্ধকতাগুলোও চিহ্নিত করতে হবে।”
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম এ সবুর নারী নির্যাতন মামলায় সাজা না হওয়ার কারণ এবং মামলার দীর্ঘসূত্রিতা দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মাহবুব জামান বলেন, “নারী নির্যাতনের বর্তমান পরিস্থিতি শুধু নারী ও কন্যা নির্যাতনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সামাজিক নৈরাজ্যে পরিণত হয়েছে।”
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগের ওপর জোর দেন।
সভায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৫১৬ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই ৯৭ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ কমিটির সদস্য মাসুদা রেহানা বেগম, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহিদা চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন আরসাদ চৌধুরী, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক, এএলআরডির সানজিদা খান এবং মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।