ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪

শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

দুবাইয়ে বিভিন্ন দেশের ধনীদের সম্পদের নথি ফাঁস, কার কত

Dubai
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বে ধনী ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর জন্য দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। সেখানে বিভিন্ন দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা গোপনে লাখ লাখ ডলার মূল্যের সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। ফাঁস হওয়া নথিতে প্রকাশ্যে এসেছে তাদের নাম ও সম্পদের পরিমাণ।

মঙ্গলবার ‘দুবাই আনলকড’ নামের ওই নথি প্রকাশ করা হয়। এতে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির মতো ব্যবসায়ীর সম্পদের হিসাবও রয়েছে।

অনুসন্ধানী এই সাংবাদিকতা প্রকল্পের সমন্বয় করেছে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) ও নরওয়ের সংবাদমাধ্যম ই-টোয়েন্টিফোর। এতে অংশ নিয়েছে ৫৮টি দেশের ৭৪টি সংবাদমাধ্যম।

প্রতিবেদনটি ওসিসিআরপির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি ওসিসিআরপির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

দুবাইয়ের ভূমি দপ্তরসহ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ফাঁস হওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। এতে বিশেষ করে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল নাগাদ দুবাইয়ে এসব ব্যক্তির মালিকানায় থাকা ও ব্যবহার করা সম্পদের বিস্তারিত চিত্র উঠে আসে।

ফাঁস হওয়া তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ (সিফোরএডিএস)। প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ও সংঘাত নিয়ে গবেষণা করে থাকে। পরে এসব তথ্য-উপাত্ত ই-টোয়েন্টিফোর এবং ওসিসিআরপির সঙ্গে ভাগাভাগি করে প্রতিষ্ঠানটি। এ অনুসন্ধানে অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসও।

ফোর্বস ২২ ধনকুবের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৬০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের ৭৬টি সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে। বিশ্বের চারটি মহাদেশের ১০টি দেশ থেকে এসেছেন তারা।

১০ ধনকুবের ও তাদের সম্পদ

ফোর্বসের প্রতিবেদনে ১০ ধনকুবেরের নাম, তাদের নিট সম্পদ ও দুবাইয়ে থাকা সম্পদের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

মুকেশ আম্বানি

ফোর্বসের প্রতিবেদনের শুরুতেই রয়েছে ভারতীয় নাগরিক মুকেশ আম্বানির নাম। তার নিট সম্পদ ১১ হাজার ২০ কোটি ডলার। সম্পদের উৎস হিসেবে ‘বিভিন্ন খাত’ উল্লেখ করা হয়েছে। দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহ কৃত্রিম দ্বীপে তার আনুমানিক ২৪ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে। মুকেশ আম্বানি একজন ভারতীয় বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী। তিনি ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তিনি প্রায় ১১ হাজার ৭৮০ কোটি ডলারের মালিক, এছাড়াও তিনি এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং বিশ্বের নবম ধনী ব্যক্তি।

এম এ ইউসুফ আলী

তিনিও ভারতীয় নাগরিক। তার পারিবারিক সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭৮০ কোটি ডলার। সম্পদের উৎস ‘বিভিন্ন খাত’। পাম জুমেইরাহ, দুবাই মেরিনা ও ইন্টারন্যাশনাল সিটিতে তাদের ৭ কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ রয়েছে।

শামশীর ভায়ালিল

আরেক ভারতীয় শামশীর ভায়ালিলের সম্পদ ৩৫০ কোটি ডলারের। সম্পদের উৎস ‘স্বাস্থ্যসেবা’ খাত। দুবাই হিলস ও দুবাই প্রোডাকশন সিটিতে তিনি ৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সম্পদের মালিক।

সুহাইল বাহওয়ান

তিনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের নাগরিক। ১৯০ কোটি ডলার সম্পদের মালিক সুহাইল বাহওয়ান। সম্পদের উৎস ‘বিভিন্ন খাত’। জুমেইরাহ বে আইল্যান্ড, মেদান ও ডাউনটাউন দুবাইয়ে তার সাড়ে ৪ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে।

আন্দ্রেই মোলচানভ

রাশিয়ার নাগরিক আন্দ্রেই মোলচানভ ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ১৩০ কোটি ডলার। সম্পদের উৎস ‘নির্মাণসামগ্রী’। পাম জুমেইরাহ এলাকায় তাদের ২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের সম্পদ রয়েছে।

বিনোদ আদানি

তিনি সাইপ্রাসের নাগরিক। ২ হাজার ২২০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক এই বিনোদ আদানি। তার সম্পদের উৎস দেখানো হয়েছে ‘অবকাঠামো ও পণ্যদ্রব্য’। এমিরেটস হিল, জুমেইরাহ লেক টাওয়ারস, জুমেইরাহ পার্ক, ডাউনটাউন দুবাই, দুবাই মেরিনা, ইন্টারন্যাশনাল সিটি ও দুবাই সিলিকন ওয়েসিসে তার ২ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে। অবশ্য ওসিসিআরপির ওয়েবসাইটে বিনোদ আদানিকে ভারতীয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

চ্যাংপেং ঝাও

কানাডার নাগরিক চ্যাংপেং ঝাও ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক। সম্পদের উৎস ‘ক্রিপ্টো মুদ্রা বিনিময়’। ডাউনটাউন দুবাইয়ে তার ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সম্পদ রয়েছে।

সকেট বর্মন

তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিক। তার সম্পদের পরিমাণ ১৫০ কোটি ডলার। সম্পদের উৎস ‘ভোগ্যপণ্য’। দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহ দ্বীপে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সম্পদ রয়েছে সকেট বর্মনের।

ইগর মাকারভ

সাইপ্রাসের নাগরিক ইগর মাকারভ। তিনি ২১০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক। সম্পদের উৎস ‘বিনিয়োগ’। পাম জুমেইরাহ এলাকায় তিনি ১ কোটি ১০ লাখ ডলারের সম্পদের মালিক।

নগিব সাবিরিস

তিনি মিশরের নাগরিক। নগিব সাবিরিস ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৩৮০ কোটি ডলার। সম্পদের উৎস ‘টেলিকম’ খাত। পাম জুমেইরাহ এলাকায় তাদের ১ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে।

দারিদ্র্যপীড়িত ও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অন্তত সাত নাগরিকের নামও রয়েছে দুবাইয়ে গোপনে সম্পদ গড়া ব্যক্তিদের তালিকায়। তাদের মধ্যে ছয়জনকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও একজনকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পাকিস্তানের পত্রিকা ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী দুবাইয়ে ১৭ হাজার পাকিস্তানি সম্পদের মালিক। তবে তথ্য-উপাত্ত ও অতিরিক্ত সূত্র ব্যবহার করে এ সংখ্যা ২২ হাজারের মতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

ওই তালিকায় নাম রয়েছে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, বাখতাওয়ার ভুট্টো জারদারি ও আসিফা ভুট্টো জারদারি; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভির স্ত্রী মিসেস আশরাফ; সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছেলে হুসাইন নওয়াজ এবং আলোচিত সাবেক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার ছেলে সাদ সিদ্দিক বাজওয়ারের।

ওসিসিআরপির তথ্য বলছে, দুবাইয়ে গোপনে সম্পদ গড়েছেন অন্তত ৩৯৪ জন বাংলাদেশি। শহরটিতে এই বাংলাদেশিদের মালিকানায় রয়েছে ৬৪১টি সম্পত্তি। বাংলাদেশিদের মালিকানায় থাকা এসব সম্পত্তির মূল্য ২২ কোটি ৫৩ লাখ ডলারেরও বেশি।

তবে বাংলাদেশিদের সম্পদ ও মালিকানার তথ্য জানানো হলেও তাদের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি ওসিসিআরপি।

এছাড়াও তালিকায় চীন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকদের পাশাপাশি ইয়েমেন, নাইজেরিয়া ও কেনিয়ার মতো দেশের নাগরিকদের নামও রয়েছে। রয়েছে নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা মিয়ানমারের একজন অস্ত্র ব্যবসায়ীর নামও।

সূত্র: ফোর্বস, ওসিসিআরপি