
কলাকে প্রায়শই সহজলভ্য ‘সুপারফুড’ হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর, তেমনই শরীরের প্রয়োজনীয় এনার্জিরও দারুণ উৎস। ফল হিসেবে পাকা কলার জনপ্রিয়তা যেমন, তেমনি সবজি হিসেবেও কাঁচকলার ব্যবহার রয়েছে।
তবে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকে যায়: কোন ধরনের কলা তাদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত— কাঁচা, পাকা নাকি মজে যাওয়া?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলা যত পাকতে থাকে, ততই এর পুষ্টিগুণ এবং শর্করা উপাদানে পরিবর্তন আসে। কাঁচা অবস্থায় ফলটির মধ্যে যে স্টার্চ থাকে, তা ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক শর্করা— যেমন গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, এবং সুক্রোজে— রূপ নেয়। ফলে কাঁচা, পাকা ও অতিপাকা কলার গুণাগুণে যেমন পার্থক্য দেখা যায়, তেমনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও এর প্রভাব ভিন্ন হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচকলা হলো ডায়াবেটিকদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প। এতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে এবং মিষ্টত্ব তুলনামূলকভাবে কম। এই উচ্চ ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত সহায়ক।
কাঁচকলা প্রিবায়োটিক জাতীয় খাবার হিসেবে কাজ করে। এটি হজমতন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং প্রদাহজনিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী।
যে কলাগুলো পুরোপুরি কাঁচা নয়, আবার পুরোপুরি পেকে হলুদ হয়ে যায়নি— সেই কাঁচা-পাকা মাঝামাঝি অবস্থার কলাও দারুণ উপকারী।
পটাশিয়ামের সর্বোচ্চ মাত্রা: এই পর্যায়ে কলায় পটাশিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। পটাশিয়াম পেশি ও স্নায়ুর কার্যক্রম সঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যাদের রক্তে শর্করার সমস্যা সামান্য বা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা এই ধরনের কলা পরিমিত পরিমাণে খেতে পারেন।
যখন কলা একেবারে হলুদ এবং পাকা হয়ে যায়, তখন এর মিষ্টত্ব বহুগুণে বেড়ে যায়। কারণ এর স্টার্চ সম্পূর্ণরূপে শর্করায় রূপ নেয়।
এই কলা দ্রুত শরীরের জন্য এনার্জি জোগায়। তাই যারা ব্যায়াম করেন বা শরীরচর্চার পর দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প। যেহেতু এতে শর্করার মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি এড়িয়ে চলাই উত্তম।
যে কলায় কালচে বা খয়েরি দাগ পড়ে যায়, সেটিই মজে যাওয়া বা অতিপাকা কলা। এই অবস্থায় ফলটির মিষ্টত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই ধরনের কলা একেবারেই পরিহার করা উচিত।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো কাঁচকলা বা অল্প পাকা কলা, যেখানে ফাইবারের পরিমাণ বেশি এবং শর্করা তুলনামূলকভাবে কম। অন্যদিকে, মজে যাওয়া অতিপাকা কলা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সূত্র : এই সময়









