
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে নেমে এলেও, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মাথাপিছু আয় ২৮২০ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাব নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবিএসের তথ্য বলছে, সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। করোনাকালের বিশেষ পরিস্থিতি বাদ দিলে গত দুই দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২৭৩৮ ডলার। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮২ ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় ছিল ২৭৯৩ ডলার, যা এবার অতিক্রম করেছে।
বিবিএস আরও জানিয়েছে যে, মাথাপিছু আয়ের এই হিসাব কোনো একক ব্যক্তির আয়ের প্রতিফলন নয়। এটি দেশের মোট জাতীয় আয় (যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও প্রবাসী আয় অন্তর্ভুক্ত) কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে নির্ধারণ করা হয়।
চলতি অর্থবছরে ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয় বাড়ার পেছনে মূল কারণ হলো টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। এবার প্রতি ডলারের গড় বিনিময় হার ধরা হয়েছে ১২০ টাকা ২৯ পয়সা, যা গত অর্থবছরের ১১১ টাকা ৬ পয়সার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। টাকার অঙ্কে চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২২১ টাকা, যা গত বছর ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার ১০২ টাকা।
অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির ছাপ অনেকের জীবনমান উন্নয়নে দেখা গেলেও, আয় বৈষম্য ও মুদ্রাস্ফীতির চাপে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এখনও সংকটে রয়েছে। এ অবস্থায় সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিপূরণমূলক পদক্ষেপ হাতে নিচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষ, শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ‘টার্গেটেড ক্যাশ ট্রান্সফার’, খাদ্য সহায়তা ও নগদ ভর্তুকির পরিকল্পনা রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন করে একটি ‘আয়ের সমতা আনতে বিশেষ তহবিল’ গঠনের কথাও ভাবছে সরকার।
সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে—কোন শ্রেণি বা পেশাজীবীদের জন্য কী ধরনের আর্থিক সহায়তা কার্যকর হতে পারে। আগামী বাজেটে এসব পরিকল্পনার প্রতিফলন দেখা যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।